ঢাকা মেইল ডেস্ক
২৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
- নতুন ক্যাম্পাসের ১ম ধাপের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে
- ২য় ধাপে অগ্রাধিকার থাকবে হল নির্মাণ
- নতুন ক্যাম্পাসের অগ্রগতির পেছনে শিক্ষার্থী আন্দোলন ছিল নিয়ামক
- বৃত্তি পাবেন সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী, দুটি হল হচ্ছে পুরান ঢাকায়
- আবাসনে সহযোগিতা করায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করলেও গত ১৯ বছরে নানা সংকট-সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে চেষ্টা থাকলেও ফলপ্রসূ তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জবির সপ্তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। দীর্ঘ অচলায়তন শেষে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অগ্রগতি, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করছেন। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে নামেন। সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে ফিরে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি, অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা মেইলকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন ঢাকা মেইলের প্রধান প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন।
ঢাকা মেইল: উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় এক বছর। কেমন কেটেছে এই সময়? এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন?
উপাচার্য: সৃষ্টিকর্তার সহায় ও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। শুভানুধ্যায়ীরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তারা এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সেখান থেকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সবটুকু কাজ যে করতে পারছি তা কিন্তু নয়, তবে শিক্ষার্থীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করা গেছে। তারমধ্যে অন্যতম সবার প্রাণের দাবি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অগ্রগতি। আমরা এসেই সেই কাজেই হাত দিয়েছি। শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছে —এটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। আমি মনে করি, একজন উপাচার্যের দুই ধরনের কাজ; ১. প্রশাসনিক, ২. একাডেমিক। একজন একাডেমিক হিসেবে যে কাজ করতে হয় তার জন্য সে সময় দিতে পারছি না। অন্যান্য কাজগুলো এত বেশি পরিমাণে করা লাগছে যে একাডেমিক বিষয়ে সময় দেওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা মেইল: কেরানীগঞ্জের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক আগে এখানকার কাজ শুরু হলেও কি কারণে এতদিন খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি বলে মনে করেন?
উপাচার্য: দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের আমাদের সাত একর জমির মাটি খুঁড়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন পুনরায় বালি ভরাট হচ্ছে। আমরা সেখানে হল নির্মাণ করব। এছাড়াও পুরান ঢাকায় দুটি হল নির্মাণের সয়েল টেস্ট ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কাজ সবগুলোই দৃশ্যমান, শিক্ষার্থীরাই দেখছে সব। সরকার, ইউজিসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কারণে এত দ্রুত কাজ এগিয়েছে, যা শিক্ষার্থীরা দেখছে। তারা আমাদেরকে খুব হেল্প করেছে। তবে নিজের জায়গায় থেকে আরও আগ্রহ ছিল, পারিনি। সে জায়গায় সন্তুষ্ট নয়। সন্তুষ্ট এটুকু, যে জায়গায় থেমে ছিল সেখান থেকে চাকা সচল করে দিতে পেরেছি। যে কাজ দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল সে কাজ চালু রয়েছে। ১৯ বছরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু এগিয়েছে সেটা পরিমাণ করা যায়নি। তবে খুবই সত্য কথা হলো, যেখানেই আমরা হাত দেই সেখানে নতুন করে কাজ শুরু করতে হচ্ছে। যে কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। দেখি অল্প সময়ের মধ্যে কতটা এগিয়ে নিতে পারি।

ঢাকা মেইল: দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান কী?
উপাচার্য: দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছরের জুন মাসে। পরবর্তীতে এটি বাড়ানো হয়েছে আবেদনের ভিত্তিতে। যদিও বাড়বে না বলে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ২০২৬ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা অনেক বড় সাফল্য। প্রকৌশল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর হয়েছে, লেকের কাজ, ঘাট নির্মাণ, সীমানা প্রাচীরের কাজ হয়েছে। প্রকৌশল ভবনের কাজ নিয়ে তদন্ত কমিটি বিবেচনা করছে। তারা ক্লিয়ারেন্স দিলে আমাদের বিল্ডিংয়ের এর কাজ শুরু হবে। এছাড়া বালু ভরাটের কাজ চলছে। সবকিছুই চলছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রথম ফেজের কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরুর আবেদন করব।
ঢাকা মেইল: দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রজেক্টের কাজ শেষ না করেই কী কারণে মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে মনে করেন?
উপাচার্য: আমার মনে হয় তাদের হয়তো ইতিবাচক কোনো ইচ্ছে ছিল না। বরং তাদের ভিন্ন এজেন্ডা ছিল তাই কাজ শেষ হয়নি। তখনকার পরিবেশ খুব বেশি ভালো ছিল না, তাই শেষ হয়নি।
ঢাকা মেইল: প্রথম ফেজ শেষ হলে নতুন ক্যাম্পাসের জন্য কোন কোন কাজ অগ্রাধিকার পাবে?
উপাচার্য: ক্যাম্পাস তৈরিতে প্রথম কাজ হলো সীমানা প্রাচীর, বালু ভরাট, ভূমি অধিগ্রহণ এসব। যার মধ্যে বালু ভরাটই ছিল সবচেয়ে বড় কাজ। গত জুন মাসে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় ফেজে বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হল নির্মাণের কাজ করা হবে। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট করে দ্বিতীয় ফেজে কি কি হবে সেটার পরিকল্পনা করা হয়নি। ইতোমধ্যে আমরা সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। একটা মিটিংও করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য হল নির্মাণের বিষয়টা অগ্রাধিকারে থাকবে।
ঢাকা মেইল: শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতার বিষয়ে অগ্রগতি কতদূর?
উপাচার্য: আবাসন ভাতার বিষয়ে আমাদের সরকারের কোনো ফান্ড নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা একটা সম্পূরক বৃত্তির ব্যবস্থা করতেছি। সেটা শিক্ষার্থীর পাবে। হল ও বৃত্তি মিলে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যকদের এই বৃত্তি দেওয়া হবে। আমরা আসলে কোনো বিষয়ের ওপর চাহিদা দেই সে অনুসারে সরকার বিবেচনা করে বাজেট দেয়। আমাদের পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আবার বাজেট দেওয়া হয়। এভাবেই চলে আসলে। আমরা একটা অস্থায়ী হল নির্মাণ করছি। আমরা ২৫ কোটি টাকা চেয়েছি। আসলে আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য সর্বোচ্চটা করতে চাই। তারা যা দেবে সেটার মতো করে কাজ করব।

ঢাকা মেইল: আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়ে সহযোগিতা করছে। এমন উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন?
উপাচার্য: আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনরা আবাসনের যে সুবিধা করে দিয়েছে এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাদের প্রতি। তারা যে সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছে সেটা আমাদের জন্য তৈরি করা কঠিন। এটা নির্মাণের আগে মন্ত্রণালয়ের লিখিত একটা অনুমোদন আছে। এছাড়া তাদের ওখানে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হওয়ারও সুযোগ পাবে, এটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরাও খুব শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে। এই সুযোগটা আমাদের জন্য বেশ ভালোই। আর আমি খুবই ডিসিপ্লিন একটা মানুষ, তাই তাদের আমার পছন্দ। ওখানে শিক্ষার্থীরা একটা নিয়মের মধ্যে থাকবে। অনেকে অনেক কথা বলেছে, কিন্তু সেখানে থাকার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ থাকতে চাইলে থাকবে, না থাকতে চাইলে সমস্যা নেই। যারা জানে-বুঝে, সবাই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। ওরা যে স্কিল করার প্রজেক্ট নিয়েছে তাতে আমাদের তৈরি করতে অনেক বেশি টাকা খরচ হতো। আমি ওদের বলব যে আমার মেয়েদের জন্য আপনারা একটা স্কিল সেন্টার তৈরি দেন।
ঢাকা মেইল: ৫ আগস্টের পর অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে এখনো ফেরেননি। তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত কী?
উপাচার্য: আমরা আবেদনগুলো আইন অনুসারে যাচাই-বাছাই করে দেখছি। সবগুলো আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, আমরা আইনের অধীনের। এটা নিয়ে ব্যাপক কাজ চলছে।
ঢাকা মেইল: কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম সংস্কার, ক্লাসরুম সংকট, শৌচাগার ও ফুড কোর্ট নির্মাণের অগ্রগতি কতটুকু?
উপাচার্য: খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুড কোর্ট চালু হবে, অডিটোরিয়াম সংস্কারে সিটি করপোরেশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একটা কমিটি আছে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করছে। ক্লাসরুম সংকটের বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে। যেভাবে সম্ভব হয় আমরা এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারবো আশা করি।
ঢাকা মেইল: জুলাই আন্দোলনে ক্যাম্পাসের অনেকে আহত-নিহত হয়েছে। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবনা কী?
উপাচার্য: ইতোমধ্যে শহীদ সাজিদের বোনকে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়েছি। আমরা মাসব্যাপী বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। বিভিন্ন বিভাগে সভা, সেমিনার, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিতর্কসহ দোয়ার আয়োজন রাখা হয়েছে। যারা আহত হয়েছে আমরা তাদের পাশে আছি। নিহতদের পরিবারেরও পাশে আছি।
ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
উপাচার্য: ঢাকা মেইলকেও ধন্যবাদ।
এমএইচটি