আমিনুল ইসলাম মল্লিক
১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪২ এএম
নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জের মানুষের পাশে দাঁড়াতে ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজীবন কাজ করার আগ্রহ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হকের। এ জন্য সংসদ সদস্য হয়ে ভূমিকা রাখতে চান তিনি। দেশপ্রেম, সামাজিকতা ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে সদাপ্রস্তুত এই আইনজীবী। এসব বিষয়সহ নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মল্লিক।
ঢাকা মেইল: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
শাহ মঞ্জুরুল হক: আমি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শ, আত্মত্যাগী দেশাত্মবোধ সবসময় আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র থাকার সময় প্রতিকূল পরিবেশ আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ফলে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ, প্রগতিশীল এবং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে ‘ল’ স্টুডেন্টস ফোরাম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগের রাজনীতি আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
শাহ মঞ্জুরুল হক: আমি যেহেতু পড়ালেখা শেষ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করছি, তাই কর্মজীবনের শুরুতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠনে যোগ দেই। বর্তমানে আমি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী লীগের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য হিসেবে কাজ করছি।
ঢাকা মেইল: নিজ নির্বাচনী এলাকায় কি কি সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত আপনি?
শাহ মঞ্জুরুল হক: আমি বলব সামাজিক কার্যকলাপ এমন একটি সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন কুপ্রথা, কুসংস্কার, অনাচার, অসমতা, বৈষম্য, বঞ্চনাসহ জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এমন অবাঞ্ছিত অবস্থার অবসান ঘটানো যায়। ব্যক্তি, দল, সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সামাজিক কার্যক্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সমাজে দারিদ্র, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, জনসংখ্যাস্ফীতি, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, চিকিৎসার অভাব, দুর্নীতি, নিরক্ষরতা, ভিক্ষাবৃত্তি, অপরাধ ও সন্ত্রাস, কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ, যৌতুক প্রথা, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামিসহ নানা সমস্যা বিরাজমান। এগুলো সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠন, সামাজিক আন্দোলন পরিচালনা, প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মানুষের জন্য সর্বদা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকা মেইল: আপনার নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের বিষয়ে জানতে চাই।
শাহ মঞ্জুরুল হক: আমি আমার নিজস্ব অর্থায়নে নিজ গ্রামের মানুষদের জন্য ৩ তলা মসজিদ, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ ও মন্দিরের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া বছরের দুই ঈদে গরিব অসহায়দের পোশাক, করোনাকালে খাদ্য সহায়তা, অসুস্থ ব্যক্তিদের সুচিকিৎসাসহ মানুষের সেবায় নিজেকে ন্যস্ত রাখার চেষ্টা করে চলছি।
এছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টি, জনমত গঠন ও নারী অধিকার আদায়ে নারীদের মধ্যে সচেতনতা ও সক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ ও তাদের সার্বিক উন্নয়নে জনসাধারণ ও যুব সমাজকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছি।
ঢাকা মেইল: আইন অঙ্গনে থেকে শেখ হাসিনার জন্য কতটুকু লড়াই করেছেন?
শাহ মঞ্জুরুল হক: আইনজীবী হিসেবে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি অবস্থা। সে সময়ে (এক-এগারো) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ সুপ্রিম কোর্ট বারের অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে মামলাগুলো পরিচালনা করি। নেত্রীর কারামুক্তিতে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলাম আমি। এছাড়া তখন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার মামলা পরিচালনা করেছি।
ঢাকা মেইল: আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
শাহ মঞ্জুরুল হক: সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেদেরকে আদর্শ ও চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলতে হবে। আইন পেশায় যারা আছেন, আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে যে ন্যায়বিচার হলো সামাজিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার সোপান। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসমক্ষে ও আদালতের কাছে আইনজীবী হিসেবে যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালাতে হবে।
আইনজীবীদেরকে আত্মমর্যাদাবোধের সাথে সাথে এই পেশার প্রতি যথাযথ নিষ্ঠা ও পেশাদারী আচরণ এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। আইন পেশা একটি জনসম্পৃক্ত পেশা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির নানান রকম মানুষ নিয়েই এখানে নিত্য চলাফেরা। সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কাছে নিজেদেরকে আপনজন হিসেবে উপস্থাপন করে সমাজের সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আইনজীবীরা সবসময় কাজ করে চলেছেন। একইসাথে জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা, মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনজীবীরা সর্বদা কাজ করে চলছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিসহ জনগণের সব ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় আইনজীবীরা ভূমিকা রেখে চলেছেন।
ঢাকা মেইল: ওকালতি জীবনে কী কী করেছেন?
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: আইনি পেশায় ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে আমার। এই সময়ে প্রয়োজনীয় গুণ ও দক্ষতায় নিজেকে সজ্জিত করার চেষ্টা করেছি। রিট ম্যাটার, কোম্পানি, বাণিজ্যিক, সিকিউরিটিজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাডমিরালটি, সিভিল, ক্রিমিনাল, ইনকাম ট্যাক্স, মানি লন্ডারিং, অর্থঋণ, দেউলিয়া, দুর্নীতিবিরোধী আইন, কাস্টমস, ভ্যাট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন আইনি ক্ষেত্রে জড়িত। বিদেশি বিনিয়োগ, আরবিট্রেশন ইত্যাদি বিশেষভাবে কোম্পানি, ব্যাংকিং এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনে দক্ষতা, বাংলাদেশের কর্পোরেট আইন, বাংলাদেশে আইন শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় আইন কলেজ মেট্রোপলিস আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করে চলছি। নিজে আইনের ছাত্রদের পড়াতে আগ্রহী হয়ে এবং আইডিয়াল ‘ল’ কলেজ, সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ এবং নর্দান ইউনিভার্সিটিতে আইনশাস্ত্র, কোম্পানি ও বাণিজ্যিক আইন, ফৌজদারি আইন, ভূমি আইনে আইনের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি।
ঢাকা মেইল: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোন কোন আইন নিয়ে কাজ করেছেন?
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সালিশ, সালিশি ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। সালিশি ট্রাইব্যুনালের আগে বহু আন্তর্জাতিক সালিশ পরিচালনা করেছি। বর্তমানে আইন উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপ লি. ও ডিরেক্টর বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লি.। বেক্সিমকো গ্রুপ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব), ইন্সটিটিউট অব চাটার্ড সিকিউরিটিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি), বোর্ড অব এয়ার লাইন্স রিপ্রেজেনটেটিভ (বিএআর), শামসুল আলামিন গ্রুপ, লোটাস কামাল গ্রুপ, কনটিনেন্টাল ট্রেডার্সের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড় ডাংরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল কাশেম মাস্টার, মা জুবাইদা কাশেম। তিনি ১৯৯৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৭ সালে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের জুনিয়র হিসেবে যোগদান করে এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। এরপর নিজস্ব ফার্ম ‘হক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেন।
এআইএম/জেএম