আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৬ জুন ২০২৩, ১০:২৪ পিএম
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা কারও অজানা নয়। এক দিকে যেমন দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল, অন্যদিকে তেমন জীবিকা নির্বাহের জন্য সেখানে নিত্য সংগ্রাম লেগেই আছে।
কয়েক সপ্তাহ আগেও জীবিকার হাহাকার দেখা গেছে পাকিস্তানে। সাধারণ দুধের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। বিনামূল্যে ময়দা পাওয়ার জন্য ট্রাকের পিছনে দৌড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার তলানিতে ঠেকেছে। বৈশ্বিক অর্থ ভান্ডার বা আইএমএফ ঋণ দিতে অস্বীকার করায় অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে দেশটিতে। এ কারণে চাপ সামলাতে বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেই পাকিস্তানেরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারি নিয়ে নতুন করে দেশটিতে অশান্তি শুরু হয়। ইমরানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে পথে নামেন অনেকে। ইতিহাসে প্রথমবার, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা যায় পাকিস্তানের রাস্তায়।
যে দেশে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন টালমাটাল, সেখানেই কিন্তু দেখা যায় সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রও। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপর এই অর্থসঙ্কটের কোনো প্রভাবই পড়ে না। তাদের বিলাসিতায়ও কোনো কমতি নেই।
জিডিপির বিচারে পাকিস্তান বিশ্বে ৪২তম স্থান অধিকার করে আছে। অথচ, সামরিক শক্তির দিক থেকে বৈশ্বিক তালিকায় এই দেশ প্রথম সারিতে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সপ্তম স্থানে রয়েছে ওই তালিকায়। যা ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইসরায়েলের মতো দেশের চেয়েও ওপরে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হলো সেই দেশের সেনাবাহিনী। তাদের অধীনে রয়েছে স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। রয়েছে রাজস্ব আদায়ের বহু মাধ্যম।
দেশটির সেনাবাহিনীতে এই মুহূর্তে কর্মরত আছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার জওয়ান। দু’হাজার ট্যাঙ্ক, চার হাজারের বেশি অত্যাধুনিক কামান, ৪২৫টি যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিন রয়েছে পাক সেনার হাতে।
এছাড়াও, পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে চীনা সেনাবাহিনীর সমর্থন। যা তার শক্তি বৃদ্ধি করেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীনের সেনাবাহিনী পাকিস্তান বা ভারতের চেয়ে উন্নত।
পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যায় ভারতের চেয়েও এগিয়ে পাকিস্তান। সে দেশের সেনাবাহিনীর কাছে ১৫০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। ভারতের কাছে রয়েছে ১৪০টি।
১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে পাকিস্তান সরকার যত অর্থ খরচ করেছে, তার ২০ শতাংশ খরচ হয়েছে সেনাবাহিনীর উন্নয়নের স্বার্থে। যা দেশের বাজেটের এক পঞ্চমাংশ।
সরকারের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে দেশটির সেনাবাহিনীর রোজগার আকাশছোঁয়া। তাদের অধীনে স্কুল থেকে শুরু করে চাষযোগ্য বিপুল জমি রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধীনে রয়েছে সে দেশের মোট ভূখণ্ডের ১২ শতাংশ জমি।
দেশটিতে সেনাবাহিনীই সর্বেসর্বা। গণতান্ত্রিক দেশ হলেও এখানে সেনাবাহিনীর আদেশই শেষ কথা। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকারই পাকিস্তানে আজ অবধি পাঁচ বছর টিকতে পারেনি। বারবার এই দেশ দেখেছে সামরিক শাসন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ৫০টিরও বেশি আলাদা আলাদা সংস্থার মালিক। যেখান থেকে সারা বছরে ২,৬৫০ কোটি ডলার আয় হয়। এই পরিসংখ্যান ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি কিংবা মুকেশ আম্বানিদের আয়ের চেয়েও বেশি।
২০০৭ সালে জানা গেছে যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মোট সম্পত্তি হচ্ছে এক হাজার কোটি পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ এব লাখ কোটি টাকারও বেশি। ২০০৭ সালে পাকিস্তানে যত বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল, সেনাবাহিনীর এই সম্পত্তি তার চেয়েও চার শতাংশ বেশি।
দেশটির সেনাবাহিনীর এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির কথা কারও অজানা নয়। সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়া সে দেশের তরুণদের কাছে স্বপ্নের মতো। যেকোনো পাক সেনা কর্মকর্তাই কোটিপতি।
পাকিস্তানের কোনো মেজর জেনারেল অবসর গ্রহণ করলে তাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ২৪০ একর চাষযোগ্য জমি দান করা হয়। সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানেরা সাধারণত বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর দেশে ফিরলে সেনাবাহিনীর অধীন কোনো সংস্থাতেই তাদের চাকরি দেওয়া হয়।
দেশটির সেনাবাহিনীতে বিলাসিতার অভাব নেই। সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরায় তারা। অথচ, সরকার এবং দেশরক্ষার জন্যই সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।
দেশে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা না থাকার জন্যই সেনাবাহিনী গঠন করা হয়। সেই সেনাবাহিনীর শাসনের অজুহাতে পাকিস্তানে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যান বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা। অভ্যন্তরীণ সংস্থা দিয়েও কাজ হয় না। ফলে মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য এগিয়ে আসে ফৌজি ফাউন্ডেশনের মতো সেনা অধিকৃত সংগঠন। তারাই অর্থনৈতিকভাবে ফুলেফেঁপে ওঠে। এভাবেই সেনাবাহিনীর শক্তি আরও বেড়ে চলে।
সূত্র : এবিপি
এমইউ