আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশই বাড়ছে। বিপজ্জনক গ্রিনহাউস গ্যাসের ফাঁদে আটকে পড়ছে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ। যার জেরে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই আক্রান্ত। ‘ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন’ (ডব্লিউএমও) বার্ষিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০২২ সালে তাপপ্রবাহের জেরে শুধু ইউরোপে ১৫ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ডব্লিউএমও দাবি করেছে, ২০২২ সালে বিশেষ করে তিনটি গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়েছে— কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড। এই গ্যাসগুলোর বলয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আটকে পড়ে। ফলে গরম বেড়ে যায়। ২০২২ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড গড়েছে। গত আট বছরে এটি ছিল সর্বোচ্চ। খবর আল জাজিরা ও সিএনএনের
ডব্লিউএমও এর সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি টালাস বলেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ক্রমেই বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনও ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও প্রতিকূলতার জেরে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মানুষ বিপর্যস্ত।’
তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন ২০২২ সাল, পূর্ব আফ্রিকায় বারবার খরা হয়েছে। পাকিস্তানের বৃষ্টি ও চীনে তাপপ্রবাহ সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ইউরোপেও তাপপ্রবাহের জেরে আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষ। এর জেরে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। মানুষ বাসস্থান ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কোটি কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশগুলো।’
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ভারত ও পাকিস্তানে বর্ষা এসেছিল তাড়াতাড়ি। আবার শেষ হয়েছিল দেরিতে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে যে প্রবল গরম পড়েছিল, তা রীতিমতো ব্যতিক্রমী। গরমের শস্য উৎপাদন কমেছে।
ডব্লিউএমও জানিয়েছে, ‘তাপপ্রবাহের জেরে ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশেই শস্য উৎপাদন কমেছে। এর ফলে এই দুই দেশ গম রফতানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। চাল রফতানিতেও কড়াকড়ি শুরু করেছিল ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। সামগ্রিকভাবে বিশ্বের খাদ্য বাজারে প্রধান খাবারের অভাব দেখা দেয়। যেসব দেশ চাল, গমের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল, তারা প্রবল সংকটে পড়ে।’
পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতের একাংশও গত বছর ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। পুরনো রেকর্ড ভেঙে গত বছর ভয়াবহ ও দীর্ঘতম তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছিল চীন। জুনের মাঝামাঝি থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত চলেছিল তাপপ্রবাহ। সবচেয়ে গরম গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছে দেশটি। স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার থেকে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল গরম। প্রবল শুকনো ছিল চীনের আগের গ্রীষ্ম, দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ। দক্ষিণ চীনে গড় বৃষ্টি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কম হয়েছিল।
তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচেনি ইউরোপও। তিন মাস প্রবল গরমে পুড়েছে এই মহাদেশ। স্পেনে কমপক্ষে ৪৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে গত বছর। জার্মানিতে ৪৫০০ জন, ব্রিটেনে ২৮০০ জন, ফ্রান্সে ২৮০০ জন, পর্তুগালে ১০০০ জন অস্বাভাবিক গরমে প্রাণ হারিয়েছেন।
একে