images

আন্তর্জাতিক

তুর্কি বায়রাক্টার ড্রোন কতটা শক্তিশালী, দাম কত?

আবুল কাশেম

১৮ মার্চ ২০২৩, ০১:৩২ পিএম

বিশ্বে বেশ কয়েকটি যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে তুরস্কের বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন। এর অত্যাধুনিক কৌশল বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। ড্রোনশিল্পে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের তুরস্ক। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন সম্পর্কে কী জানা যায়? কেন এই ড্রোনের প্রতি বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলোর আগ্রহ বাড়ছে?

তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি কোম্পানি ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন উৎপাদন ও বিক্রি করতে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন বিশেষ নজর কেড়েছে। এই ড্রোন ব্যবহার করেই রাশিয়ার মস্কভা যুদ্ধজাহাজ, অস্ত্রের গুদাম, কয়েকটি কমান্ড সেন্টার এবং রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে হামলা করেছে ইউক্রেন। যাতে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিকট অতীতে সিরিয়া ও লিবিয়ার সংঘাতে এবং অতি সম্প্রতি নাগর্নো কারাবাখের যুদ্ধে এই ড্রোনের কার্যকর প্রয়োগ দেখা গেছে। এর পরই এই ড্রোনের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশ্বের ১৪টিরও বেশি দেশ তুরস্ক থেকে এই ড্রোন কিনেছে। এদের মধ্যে ইউক্রেন ছাড়াও আছে আজারবাইজান, ইথিওপিয়া, লিবিয়া. মরক্কো, পোল্যান্ড, কাতার, তুর্কমেনিস্তান। আরও ১৬টি দেশ ড্রোন কেনার জন্য চুক্তি করেছে বলে গত বছর জানিয়েছিলেন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

bayraktar tb2 drone

বায়রাক্টার টিবি-টু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইকারটেক ডটকমের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি হচ্ছে এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং হামলায় অংশ নিতে পারে। এই ড্রোনে একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক- যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।

এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায় এবং তারপর দিক-নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়।

এটি জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে কোথাও একটি কন্টেইনার বা ট্রাকে মোবাইল বেজ স্থাপন করে সহজে ড্রোন পরিচালনা করা যায়। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন বা হামলা চালানো যায়। ২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের সেনা বাহিনী ও ন্যাশনাল পুলিশ এই ড্রোন ব্যবহার করছে।

bayraktar tb2 drone

বায়রাক্টার টিবি-টু সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়:
- বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনে চারটি লেজার গাইডেড স্মার্ট রকেট সংযুক্ত করা যায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে।
- ড্রোনটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে।
- বেজ স্টেশন থেকে তিনশো কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ড্রোনটি চালানো যায়।
- এর ভেতরে একমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিএসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ন্যাভিগেশন করতে পারে।
- সর্বোচ্চ সাতশো কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি উড়তে পারে। মোট জ্বালানি ধরে ৩০০ লিটার।

আরও পড়ুন: একটানা যায় ২ হাজার কিলোমিটার, কতটা শক্তিশালী ইরানের ‘কামিকাজে’?

- ড্রোনটি টেক-অফ, ল্যান্ডিংসহ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। এর কম্পিউরাইডজ সিস্টেমে তিনটি অটো পাইলট প্রোগ্রাম রয়েছে।
- বায়রাক্টার টিবি-টু ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে আকাশে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফিট পর্যন্ত উড়তে এবং সর্বোচ্চ ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট ওড়ার রেকর্ড রয়েছে।

- ড্রোনে থাকা রিয়েল ইমাজেরি টাইম ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চমানের ভিডিও দেখতে পারে।
- ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইলেও নজরদারি করা সম্ভব।

bayraktar tb2 drone

- তবে এসব ড্রোনের একটি দুর্বল দিক হলো, এগুলো আকারে বড় আর তুলনামূলক গতি কম। ফলে এগুলো গুলি করে নামানো সহজ।
- ইউক্রেনের ব্যবহার করা এরকম বেশ কিছু বায়রাক্টার ড্রোন ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়ার বাহিনী।

কারা তৈরি করে বায়রাক্টার টিবি-টু
বাইকার ডিফেন্স নামের প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে বায়রাক্টার টিবি-টু এবং বায়রাক্টার আকিনচি নামে দুটি ড্রোন। আকারে এটি একটি ছোট উড়োজাহাজের সমান। এতে ক্যামেরা লাগানো আছে এবং লেজার-নিয়ন্ত্রিত বোমাও বহন করা যায়।

২০২২ সালে রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বায়রাক্টার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হালুক বায়রাক্টার বলেছেন, তাদের কোম্পানি ১৪টি দেশে এ জাতীয় ড্রোন বিক্রি করেছে। সিরিয়া, লিবিয়া এবং নাগার্নো-কারাবাখের যুদ্ধক্ষেত্রে এসব ড্রোনের কার্যক্রম দেখে আফ্রিকা থেকে শুরু করে ইউরোপের অনেক দেশে ড্রোনের চাহিদা বাড়ছে। পোল্যান্ড এর মধ্যেই এ জাতীয় ড্রোন কেনার চুক্তি করেছে।

bayraktar tb2 drone

তার ভাই, বায়রাক্টার টেকনোলজির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সেলুক বায়রাক্টার রয়টার্সকে বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা ও উন্নত গোলা নিক্ষেপের ক্ষমতা রয়েছে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনের, ফলে সারা বিশ্বই আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহক হয়ে উঠছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জামাতা সালুক বায়রাক্টার বলেন, তার কোম্পানি বছরে ২০০ টিবি-টু ড্রোন তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুন: কতটা শক্তিশালী মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান?

১৯৮৬ সালে গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানির যন্ত্রপাতি তৈরি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কোম্পানিটি তৈরি করেন সালুক ও হালুক বায়রাক্টারের পিতা ওজদেমির বায়রাক্টার । তবে ২০০৫ সাল থেকে তারা মানবহীন বিমান শিল্পের ওপর বিনিয়োগ করতে শুরু করে।

দাম কত?
এই পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঁচশোর বেশি বায়রাক্টার টিবি-২ ড্রোন সরবরাহ করা হয়েছে বলে কোম্পানি জানিয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের ড্রোনের ক্রেতা বাড়ছে।

তুরস্ক একেকটি ড্রোন অন্তত ১০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যে বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় দশ কোটি টাকা। যদিও ইউক্রেনের কাছে একেকটি বিক্রি করা হয়েছে সাত লাখ মার্কিন ডলারে।

সূত্র: বিবিসি

একে