images

আন্তর্জাতিক

কাশ্মিরের পরতে পরতে সৌন্দর্য ছড়িয়েছে ‘ঝিলাম’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৫ পিএম

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঝিলাম নদী একটি শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক বিস্ময়। এটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মির ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সঙ্গে জুড়েছে। নদীটি প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। কাশ্মির উপত্যকার রুক্ষ ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এটি। এর থেকেই পানি পায় চারপাশের লোকজন এবং প্রকৃতি।

ঝিলাম নদী এই অঞ্চলের কৃষি শিল্পের জন্য সেচের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। নদীর উর্বর তীরগুলো ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। এর জন্য অবিচ্ছিন্ন জলপ্রবাহ অপরিহার্য। কৃষি শিল্প এই অঞ্চলের অনেক লোকের জীবিকার প্রধান উৎস এবং ঝিলাম নদী এই শিল্পকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু পানি সরবরাহ নয়। ঝিলাম নদীর প্রান্ত ঘিরে রয়েছে প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং ইতিহাস। 

jhelum river

এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ঝিলম নদীর ভূমিকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পর্যটন। নদীটি সারাবিশ্ব থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে, যারা এর অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্য নিতে এবং বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করতে আসে। বোটিং বা মাছ ধরা যাই হোক না কেন, ঝিলাম নদীতে দুঃসাহসিক কাজ এবং বিনোদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

ঝিলাম নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই বিস্ময়কর। নদীটি সবুজ এবং আকর্ষণীয় পর্বত দ্বারা বিস্তৃত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর উপত্যকায় বেশকিছু ঐতিহাসিক স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মার্তান্ড সূর্য মন্দির এবং মুঘল উদ্যান, শালিমার বাগ এবং নিশাত বাগ, যা নদীর তীরে অবস্থিত। এই বাগানগুলো এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রমাণ। এখানকার প্রকৃতি মানসিক শান্তি এনে দেয়।

jhelum river

কাশ্মিরি লেখক আওবাইদ আহমেদ আখন বলেন, কাশ্মিরের সারমর্ম ঝিলাম নদী। এর জনগণ ও সংস্কৃতি এর পানির প্রবাহে মিশে আছে।

ঝিলাম নদীর তীরে মাছ ধরা আরেকটি জনপ্রিয় কাজ। নদীটি কার্প, ক্যাটফিশ এবং ট্রাউটসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের আবাসস্থল। মাছ ধরা শুধু এই অঞ্চলের অনেক মানুষের জীবিকার উৎস নয়, এটি পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়।

jhelum river

নদীর ধারে বেশ কয়েকটি ফিশিং লজ এবং ক্যাম্পিং সাইট রয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা মাছ ধরতে ধরতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। ঝিলাম নদী জলজ চাষকেও সমর্থন করে, এর তীরে বেশ কিছু মাছের খামার রয়েছে। এই মাছের খামারগুলো স্থানীয় মানুষের জন্য খাদ্য এবং জীবিকা সরবরাহ করে এবং এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও অবদান রাখে।

jhelum river

আওবাইদ আহমেদ আখন বলেন, আমিও সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যারা ঝিলাম নদীর চারপাশে শৈশব কাটিয়েছে। এই শৈশব স্মৃতিগুলো আমার জীবনে একটি বিশেষ স্থান করে রেখেছে। আমি বন্ধুদের সঙ্গে মাছ ধরতাম। এটি আমাদের ধৈর্যের মূল্য শিখিয়েছিল। একটি মাছ হুকে আটকানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এর রোমাঞ্চ ছিল অতুলনীয়।

ঝিলাম নদী জলবিদ্যুতের একটি উৎস। এর তীরে অবস্থিত বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের ঝিলাম নদীর উপর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে দুল হস্তি বিদ্যুৎ প্রকল্প, উরি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সালাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং এর সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে।

jhelum river

ঝিলাম নদী একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়। এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে এর ভূমিকা এবং এর সৌন্দর্য কাশ্মিরের রূপ আরও বাড়িয়েছে। উর্বর তীর থেকে এর শ্বাসরুদ্ধকর ল্যান্ডস্কেপ এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। ঝিলামের পানি এখনও প্রাচীন সাম্রাজ্য এবং আধুনিক সংগ্রাম, বিজয় এবং বিদ্রোহ, প্রেম এবং বিরহের গল্প বলে।

সূত্র: ডেইলি গুডমর্নিং কাশ্মির

একে