আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৪৮ এএম
ঠিক এক বছর আগে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। যা পুরো বিশ্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়। করোনাভাইরাসে বিপর্যন্ত পৃথিবী পড়ে যায় চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে। জ্বালানি থেকে শুরু করে খাদ্য- সবকিছুরই সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউক্রেনে রাশিয়ার এই হামলা বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পৃথিবীকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করে দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূলত তিনটি দলে ভাগ হয়ে যায়। কতগুলো দেশ অবস্থান নেয় ইউক্রেনের পক্ষে। কতগুলো দেশ অবস্থান নেয় রাশিয়ার বিপক্ষে। আর কতগুলো দেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়।
ইউক্রেনকে অস্ত্র দিচ্ছে যেসব দেশ
জার্মান প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্য অনুসারে, বিশ্বের অন্তত ৩২টি দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র, যুদ্ধ সরঞ্জাম বা সেনাবাহিনীর জন্য আর্থিক সহায়তাসহ নানা সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানকারী এই ৩২টি দেশের মধ্যে ২৫টি দেশ যুক্তরাষ্টের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সদস্য।
দেশগুলোর মধ্যে আছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, ইতালি, জাপান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, তুরস্ক।
সর্বশেষে জানুয়ারিতে ইউক্রেনে আধুনিক ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি। যুক্তরাজ্য ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক সরবরাহ করবে, জার্মানি ৮৮টি লেপার্ড ট্যাংক পাঠাতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক ডজন শক্তিশালী এম১ আব্রাহাম ট্যাংক পাঠাবে।
যুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিচ্ছে যেসব দেশ
কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক এবং সামরিক সহায়তায হিসেবে কমপক্ষে ১১৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৪০টি দেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই ৫১.২ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এছাড়া ইইউ কমিশন, ইইউ কাউন্সিল এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেনকে ৩৭.৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়ায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ৭.৬ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া ২০ নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলো ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যেসব দেশ
বিশ্বের অন্তত ৪৬টি দেশ বা অঞ্চল রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মস্কোর ওপর ১১ হাজার ৩০৭টিরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশে পরিণত করেছে।
রাশিয়ার ওপর সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা দিয়েছে ১ হাজার ৯৪৮টি নিষেধাজ্ঞা। এক হাজার ৭৭৭টি সুইজারল্যান্ড, এক হাজার ৫৯০টি কানাডা, এক হাজার ৪১৪টি যুক্তরাজ্য এবং ইইউ এক হাজার ৩৯০টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অবস্থান
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর জাতিসংঘ ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম জরুরি অধিবেশন ডাকে। ১৯৩ সদস্যের পরিষদ তখন থেকে ইউক্রেন সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্বেগ মোকাবিলায় চারটি বিশেষ প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে।
জরুরি অধিবেশন-১ (২ মার্চ, ২০২২)
ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি। ১৪১টি দেশ জাতিসংঘের এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় যাতে রাশিয়াকে ‘অবিলম্বে, সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে’ ইউক্রেন থেকে তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
চীন, ভারত, ইরান, সাউথ আফ্রিকাসহ ৩৫টি দেশ ভোট দেয়নি। বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া এবং রাশিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।
জরুরি অধিবেশন-২ (২৪ মার্চ, ২০২২)
ইউক্রেনে ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া এবং বেসামরিক জানমাল রক্ষায় প্রস্তাব তোলা হয়।
এর পক্ষে ভোট দেয় ১৪০ দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং সিরিয়া। ৩৮টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। আর ১০টি দেশ ভোটে অনুপস্থিত ছিল।
জরুরি অধিবেশন-৩ (৭ এপ্রিল, ২০২২)
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া প্রশ্নে ৯৩টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ২৪ দেশ। ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ৫৮টি দেশ।
জরুরি অধিবেশন-৪ (১২ অক্টোবর, ২০২২)
ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করায় দেশটির নিন্দা। এ প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৩টি দেশ ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ৫টিড দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ৩৫টি দেশ।
সব রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেয় ১০২টি দেশ। দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, অ্যান্ডোরা, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, কানাডা, চাদ, চিলি, কলম্বিয়া, কোমোরোস, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডিআরসি, ডেনমার্ক, জিবুতি, ডোমিনিকা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, পূর্ব তিমুর, ইকুয়েডর, এস্তোনিয়া, ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, গ্রীস, গ্রেনাডা, গুয়াতেমালা, হাইতি, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, আইভরি কোস্ট, জ্যামাইকা, জাপান, কিরিবাতি, লাটভিয়া, লেবানন, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, লিচেনস্টাইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালাউই, মাল্টা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মলদোভা, মোনাকো, মন্টিনিগ্রো, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পালাউ, পানামা, পাপুয়া নিউ গিনি, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, সেন্ট লুসিয়া, সামোয়া, সান মারিনো, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে, সার্বিয়া, সেশেলস, সিয়েরা লিওন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সোমালিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, বাহামা, তুরস্ক, টুভালু, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে এবং জাম্বিয়া।
একটি রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে অন্তত ৪৭টি দেশ। দেশগুলো হলো- অ্যাঙ্গোলা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বার্বাডোস, বেলিজ, ভুটান, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে, মিশর, ঘানা, গিনি-বিসাউ, গায়ানা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কেনিয়া, কুয়েত, লেসোথো, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, নেপাল, নাইজার, নাইজেরিয়া, ওমান, কাতার, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, সৌদি আরব, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ সুদান, সুরিনাম, থাইল্যান্ড, গাম্বিয়া, টোগো, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভানুয়াতু এবং ইয়েমেন।
ভোটদানে থেকে বিরত ছিল ১৬টি দেশ। দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, ক্যামেরুন, এল সালভাদর, নিরক্ষীয় গিনি, ইসোয়াতিনি, গিনি, ভারত, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া এবং উগান্ডা।
অন্তত একটি রেজুলেশনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৯টি দেশ। দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, বলিভিয়া, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কিউবা, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাওস, মালি, নিকারাগুয়া, চীন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জিম্বাবুয়ে। ৪টি দেশ সব রেজুলেশনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং সিরিয়া।
কোনো রেজুলেশনেই ভোট দেয়নি ৪টি দেশ। দেশগুলো হলো- আজারবাইজান, বুরকিনা ফাসো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা। অন্যদিকে একমাত্র দেশ হিসেবে গ্যাবন একটি প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা