আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৮ এএম
এক বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ! দীর্ঘ এই সময়েও দুই দেশের এই সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো বর্ষপূর্তিতে এই যুদ্ধ আরও জোরালো হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। বৃহস্পতিবার চলতি বছরেই আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘সারমাট’ মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই সঙ্গে বরাবরের মতোই অনড় অবস্থানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুদ্ধের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালেও রাশিয়াকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে বিজয় অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘শত্রু যাই করুক না কেন, আমরা সবকিছু পুনর্নির্মাণ এবং পুনরুদ্ধার করব।’
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন পুতিন। এরপর থেকেই চলেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মাঝে পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞার ফলে দুই দেশের এই সংঘাতের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে আমদানিনির্ভর দেশগুলো। কারণ, জ্বালানি রফতানিতে যেমন রাশিয়ার ‘রাজত্ব’, তেমনি খাদ্য রফতানির ক্ষেত্রে আছে ইউক্রেনের বড় ‘প্রভুত্ব’। ফলে যুদ্ধের প্রভাবে রফতানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় দেশে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যও ‘পাগলা ঘোড়ার’ পিঠে চড়ে লাগামহীনভাবে বেড়েছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জ্বালানির ক্ষেত্রে।
এদিকে, দীর্ঘসময় ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে আরও একবার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বুধবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সভায় আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই যুদ্ধ যেমন ‘আঞ্চলিক অস্থিরতাকে’ উসকে দিচ্ছে তেমনি বিশ্বজুড়ে ‘উত্তেজনা এবং বিভেদ’ সৃষ্টি করছে। এ কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংকট সমাধানের ওপর থেকেও দৃষ্টি সরে যাচ্ছে।
তবে জাতিসংঘ মহাসচিব যখন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, ঠিক তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে চলতি বছরেই আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘সারমাট’ মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। ২০১৮ সালে নিজ দেশের আন্তঃমহাদেশীয় এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। যা গত বছর মোতায়েন করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়। তবে বৃহস্পতিবার ফের নতুন করে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের ধারণা, তরল-জ্বালানি ব্যবহার করে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র আরএস-২৮ সারমাট সতান-২ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে বানানো হয়েছে। ১১৫ ফুট দীর্ঘ এই ক্ষেপণাস্ত্র ১৮ হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইউক্রেন সফরের কিছু আগে এই সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে সে পরীক্ষা ব্যর্থ হয় বলেও ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। যদিও বৃহস্পতিবার পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া পারমাণবিক ত্রয়ীকে শক্তিশালী করতে আগের মতোই বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। চলতি বছরেই সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম লঞ্চারকে যুদ্ধের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
এদিকে, যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে জোরালো হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি নানা পদক্ষেপও নিয়েছে ইউক্রেন। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবারও যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভেঙ্গে পড়িনি, আমরা অনেক অগ্নিপরীক্ষা কাটিয়ে উঠেছি এবং আমরা জয়ী হব। যারা এই মন্দ, এই যুদ্ধটি আমাদের দেশে নিয়ে এসেছে তাদের আমরা হিসাব দেব।’
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা, হিন্দুস্তান টাইমস্।
/আইএইচ