images

আন্তর্জাতিক

তুরস্কে উদ্ধার ৫৭৪ শিশুর বাবা-মায়ের খোঁজ মেলেনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৭ এএম

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিশাল অঞ্চল। ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের নিচ থেকে এখনও উদ্ধার হচ্ছে জীবিত মানুষ। তুরস্কে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭৪টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে যাদের বাবা বা মা কাউকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে এমন অনেক বাবা-মা রয়েছেন যারা হন্যে হয়ে তাদের সন্তানের খোঁজ করছেন কিন্তু তাদের কী অবস্থা হয়েছে তা জানেন না।

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াট ওকতায় এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া মা-বাবাহীন ৫৭৪ শিশুর মধ্যে মাত্র ৭৬ জনকেনিকটাত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। 

দেশটিতে এখনও সন্তানের খোঁজ পাননি বহু বাবা-মা। ছেলে-মেয়ের খোঁজ চেয়ে প্রশাসনের দেওয়া জরুরি নম্বর আর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর হাজারো ফোন আসছে।

earthquake

কারহামানমারাসের বাসিন্দা সেরকান টোটাগলু চার সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তবে সব হারিয়ে আশ্রয় এখন ত্রাণ শিবিরেই। চোখের সামনে নিজেদের বাড়িটাকে গুঁড়িয়ে যেতে দেখার পরে ছ’বছরের ছোট মেয়েটা ক্রমাগত বাবাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, ‘আমরা কি মরে যাব বাবা?’ অসহায় টোটাগলু আর তার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের আস্বস্ত করে শুধু বলতে পারছেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু কীভাবে? প্রাণে বাঁচলেও খাব কী-  প্রশ্ন টোটাগলুর।

উত্তর জানা নেই ৫২ বছরের সেলমারও। নাতি-নাতনিদের যতটা পারছেন আগলে রাখছেন। ভূমিকম্প ছাড়া আর যেকোনও বিষয়ে কথা বলতে রাজি তিনি। বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা কিছুতেই মনে করতে চান না। তবু পিছু ছাড়ছে না প্রশ্ন। পাঁচবছরের নাতি থেকে থেকেই প্রশ্ন করছে, ‘ফের ভূমিকম্প হতে পারে?’

তুরস্কে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের দলে রয়েছেন মনোবিদ সুয়েডা দেভেজি। তিনি বলেন, ‘শিশুমনে এই বিপর্যয়ের যে কালো ছাপ পড়েছে তার জন্য দীর্ঘ চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি বড়দের মনেরও যত্ন নিতে হবে।’ 

earthquake

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক মায়ের কথা জানালেন সুয়েডা। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ওই মহিলা ঘটনার অভিঘাতে একেবারে চুপ করে গিয়েছেন। সন্তানদের যত্ন নেওয়া তো দূর, নিজেও খেতে-ঘুমোতে পারছেন না। শিশুমনে ঘটনার অভিযাত পর্যবেক্ষণের জন্যে ওদের হাতে রং-তুলি তুলে দিয়েছেন সুয়েডারা। যেমন খুশি তেমন আঁকতে বলা হয়েছে ওদের। সুয়েডা জানান, নজর রাখতে হবে। হুট করে বেরিয়ে আসতে পারে অবসাদ বা স্বজন হারানোর ছবি।

পাশাপাশি, তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে ভূমিকম্পে ধ্বস্ত সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ এখনও চলছে। তবে সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ থাকায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলিতে ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে আলোচনায় ওই রাস্তাগুলো খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান আন্তোনিয়ো গুতেরেস জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে সিরিয়া সরকার।

earthquake

সিরিয়া এবং তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ছুঁয়েছে। এক টুইটাবার্তায় এটি জানিয়েছে স্পেক্টেটর ইনডেক্স। তুরস্কে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে, সিরিয়ায় এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। 

তীব্র ঠাণ্ডা ও প্রতিকূল পরিবেশে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের আশা আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের কংক্রিট সরালেই মিলছে লাশ।

একে