আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২৫ এএম
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের নবম দিন আজ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত অনেক ভবনে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত মৃত্যু বেড়ে ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনরা। তারা এখন তাদের দেহাবশেষ পাওয়ার আশায় রয়েছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের এখানে মৃতের সংখ্যা ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পকে ছাড়িয়ে গিয়ে ৩১৬৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এটি আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫৭১৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
তুরস্কে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এরদেম আভসারোগ্লুর বোন, তার স্বামী এবং তাদের দুই সন্তান আন্তাকায় ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছিল। তবুও তারা জীবিত ছিল এবং উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। এর দেড় দিন পর মঙ্গলবার রাতে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি জেনারেটর থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর আভসারোগ্লু, একজন পেশাদার অগ্নিনির্বাপক কর্মী তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েন।
আগুন লাগার পর ধ্বংসাবশেষ থেকে আর কোনো শব্দ আসেনি। প্রায় পাঁচ দিন পর রোববার ভবনের অবশিষ্টাংশ থেকে তাপ নির্গত হয়েছিল। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপটি সরিয়ে ফেলার কাজ করছিলেন। আভসারোগ্লু তার পরিবারের বেঁচে থাকার আর কোনো আশা রাখেননি।
তিনি বলেন, 'এখন সপ্তম দিন (রোববার), সবাই ক্লান্ত, আমরা শুধু এক টুকরা লাশ খুঁজে পেতে চাই। কিন্তু আমরা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না, সম্ভবত তারা পুরোপুরি পুড়ে গেছে।'
ওই ব্লকটিতে প্রায় ৮০ জন লোক বাস করে। তাদের মধ্যে ২১ জনকে আগুন লাগার আগে উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া ১২ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বাকি ৪৭ জন এখনও নিখোঁজ। সেখান থেকে মৃতদেহের অবস্থা আরও বেদনা বাড়িয়েছে। আভসারোগ্লু বলেন, 'কিছু পরিবার শুধু আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে হাড় সংগ্রহ করেছিল।'
উদ্ধারকারী এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ স্পষ্ট ছিল। কারণ ১০ বছর বয়সী বিল্ডিংটি কীভাবে ধসে পড়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অপরদিকে এর আশেপাশের অনেক পুরনো ভবনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একজন উদ্ধারকারী ডেডে অনেক চেষ্টার পর অবশেষে তার পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। তিনি তার বাবাকে দাঁত দেখে শনাক্ত করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এক সপ্তাহ ধরে আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। যদি আমাদের সঠিক যন্ত্রপাতি থাকত তাহলে আমরা ৪০-৫০ জনকে বাঁচাতে পারতাম।'
ঘটনার ৯ দিনে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য মরিয়া অনুসন্ধান শেষ সময়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন যে, সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং বিল্ডিংয়ের তীব্রতার কারণে উদ্ধারের শেষ আশাও প্রায় নিভে যাচ্ছে।
মেক্সিকো ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এডুয়ার্ডো রেইনোসো অ্যাঙ্গুলো অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন যে, মানুষের জীবিত খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন খুব কম।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জরুরী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক ডেভিড আলেকজান্ডার বলেন, এই প্রতিকূলতার মোকাবেলার শুরুটা খুব একটা ভালো ছিল না। অনেক বিল্ডিং এতটাই খারাপভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল যে তারা খুব ছোট টুকরোয় ভেঙে পড়েছে, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুব কম জায়গা সেখানে রয়েছে।
তিনি বলেন, 'যদি কোনও ধরনের ফ্রেম বিল্ডিং চলে যায়, সাধারণভাবে বলতে গেলে আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোলা জায়গা খুঁজে পাই যেখানে আমরা সুড়ঙ্গ করতে পারি। তুরস্ক এবং সিরিয়ার এই ছবিগুলোর মধ্যে কয়েকটির দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানো কোনও তেমন স্থান নেই।'
তীব্র ঠাণ্ডা বাঁচার আশা আরও ক্ষীণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেকের জরুরি ওষুধের অধ্যাপক ডাঃ স্টেফানি লারেউ বলেন, ঠাণ্ডায় শরীর গরম রাখার জন্য কাঁপতে থাকে। এতে প্রচুর ক্যালোরি বার্ন হয়, যার ফলে খাবার থেকে বঞ্চিত লোকেরা আরও দ্রুত মারা যায়।
সূত্র: আল জাজিরা
একে