আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:০০ পিএম
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হওয়ার পর রোববার ৭ম দিন। এখন পর্যন্ত দুই দেশে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে বাঁচার আশা করছেন অনেকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আশা ক্ষীণ হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার মানুষ এখনও আটকে আছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। উদ্ধার অভিযান চলছে পুরোদমে।
দক্ষিণ তুরস্কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কিছু জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানে দায়িত্বরত তিনটি উদ্ধারকারী দল।যদিও গত কয়েকদিনে অলৌকিকভাবে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু জীবিত অবস্থায় আরও অনেককে উদ্ধারের আশা ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে শনিবার জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি অভিযান স্থগিত করেছে। একজন উদ্ধারকারী বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কেউ আইন ভঙ্গ করলে তিনি জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র শনিবার ভোরে জানিয়েছেন, হাতায় প্রদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ায় অস্ট্রিয়ান ফোর্সেস ডিজাস্টার রিলিফ ইউনিটের বেশ কয়েকজন কর্মী অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একটি বেস ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েস এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'তুরস্কে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে আগ্রাসন বাড়ছে।'
অস্ট্রিয়া উদ্ধার প্রচেষ্টা স্থগিত করার কয়েক ঘণ্টা পরে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তুর্কি সেনাবাহিনী সুরক্ষা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যেন উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু করা যায়।
সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ গ্রুপ আইএসএআর এবং জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফের (টিএসডব্লিউ) জার্মান শাখাও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে অভিযান স্থগিত করেছে। আইএসএআর এর মুখপাত্র স্টেফান হাইন বলেন, 'বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে, গুলিও চালানো হয়েছে।'
আইএসএআর এর অপারেশন ম্যানেজার স্টিভেন বেয়ার বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন যে খাদ্য, পানি সেইসাথে মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। আমরা নিরাপত্তা পরিস্থিতির খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিরাপদ করে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই জার্মান উদ্ধারকারী দলগুলো আবার কাজ শুরু করবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান হাতায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি, তিনি শনিবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে সরকার এই অঞ্চলে অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি। এর মানে হচ্ছে, যারা লুটপাট বা অপহরণের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবে।
এএফপি জানিয়েছে, লুটপাটের অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নগদ অর্থ, গহনা এবং ব্যাংক কার্ডসহ বেশ কয়েকটি বন্দুক জব্দ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
জাতিসংঘ বলেছে যে, ভূমিকম্পের পরে সিরিয়ায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হতে পারে। এখন তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রায় ৯ লাখ লোকের জরুরি খাদ্যের (গরম খাবারের) প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
একে