আবুল কাশেম
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
সম্প্রতি জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউক্রেনকে। যুক্তরাষ্ট্রের এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক এবং জার্মানির লেপার্ড-২ ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মত বিশ্লেষকদের। তবে এতেই থেমে থাকছেন না ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এখন তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইছেন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।
তবে জেলেনস্কির এমন আবদার মানতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই উদার হলেও এফ-১৬ এর বিষয়ে তারা কিছুটা কঠোর। যদিও আব্রামস ট্যাংকের বিষয়েও শুরুতে একই মত জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ব্যাটেল ট্যাংকের প্রতিশ্রুতি পেতে না পেতেই ইউক্রেন সময় নষ্ট না করে আরএ ভারি সামরিক সরঞ্জানের জন্য তদ্বির শুরু করেছে। রাশিয়ার হামলা মোকাবেলা করতে এবার উন্নত বোমারু বিমান চায় ভোলোদিমির জেলেনস্কির সরকার।
তবে এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের এমন অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেখাচ্ছেন না পশ্চিমা নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে নিলাম প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরাসরি এফ-১৬ বোমারু বিমান পাঠানোর প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থান নেন। যদিও পরে তিনি এই বিষয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু কেন এফ১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দিতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র? এ নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান চালানোর জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। তেমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ইউক্রেনের নেই। এছাড়া এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ইউক্রেনকে এই যুদ্ধবিমান দিলে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বিশাল অংকের অর্থ খরচ হবে। হয়তো সেই খরচও বহন করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
আরও পড়ুন: কতটা শক্তিশালী মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান?
তবে এমন যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেওয়ার সবচেয়ে বড় যে সমস্যা রয়েছে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে কোনও কিছুই আলোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। তবে বোমারু বিমান সরবরাহের অনুরোধ মানার আগে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। যেমন সেই বিমান রাশিয়ার ভূখণ্ড স্পর্শ করবে না।
সেইসঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তেজনা আরও বাড়াতে চান না বলে জানিয়েছেন মাক্রোঁ। ফরাসী প্রেসিডেন্টের এই কথাটির তাৎপর্য রয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনকে প্রায় সবদিক থেকেই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমারা। দিন দিন তাদের সাহায্যের পরিধি বাড়ছে। ভারী অস্ত্রের বহরও ঢুকছে ইউক্রেনে।
ইউক্রেন যদি পশ্চিমা অস্ত্রে শক্তিশালী হয়ে রাশিয়ায় আক্রমণ করে বসে তাহলে তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এখন পর্যন্ত দেশ দুটি ইউক্রেনের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। যদি এটি রাশিয়ার ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা গোটা ইউক্রেনেও ছড়াবে। এরপর তা গোটা ইউরোপ এমনকি বিশ্বজুড়েও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার জানিয়েছে যে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না। এছাড়া ন্যাটোও একই মত দিয়ে আসছে। সেই ধারা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে আরও হিসেবি হতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
এদিকে ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার বিরোধিতা করেছে রাশিয়া। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে, এসব অস্ত্র দিয়ে রুশ সেনাদের আটকাতে পারবে না ইউক্রেন। বরঞ্চ যুদ্ধের গতি ও হামলার তীব্রতা বাড়বে।
পশ্চিমা বেশ কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে যে, শীত চলে যেতেই হামলার তীব্রতা বাড়াবে রাশিয়া। সেটি মোকাবেলায় ইউক্রেনকে প্রস্তুতি নিতে হবে। পশ্চিমা ভারী অস্ত্র ইউক্রেনকে এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তবে এর ব্যবহার সঠিকভাবে করা জানতে হবে।
একে