images

আন্তর্জাতিক

কোথাও নেই এক ফোঁটা পানি, মৃত্যুর মুখে লাখ লাখ মানুষ

আবুল কাশেম

১৭ মার্চ ২০২২, ০২:০৩ পিএম

বিস্তীর্ণ এলাকা। চারদিকে ধু ধু মরুভূমি। যেখানে একসময় বিশাল বসতি ছিলো সেখানে এখন বিরান। যে খামার পূর্ণ ছিল প্রাণীতে, সেটি এখন প্রাণশূন্য। কয়েক বছর আগে যেখানে ফলতো ফসল, সেখানে এখন কিছুই ফলে না। মাইলের পর মাইল গেলেও মেলে না এক ফোঁটা জল। পানীয় জলের অভাবে মৃত্যুর মুখে লাখ লাখ মানুষ। নিজেদের ঘরে বাস করা এসব মানুষ এখন আশ্রয় খুঁজছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। 

বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যতটা সতর্ক। তারচেয়ে কয়েকগুণ গতিতে এর প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। তার মধ্যে অন্যতম সোমালিয়া। দেশটি চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ সামান্য খাবার ও পানির জন্য সংগ্রাম করছেন।

দুই বছর ধরে দক্ষিণ সোমালিয়ার হাবিবা মাও ইমানের খামারে বৃষ্টির পানি পড়েনি। এ সময় যে খামার পশুতে পূর্ণ ছিল এখন সেখানে কিছুই নেই। পানি ও খাবারের অভাবে সব পশুরই মৃত্যু হয়েছে। 

সোমালিয়ার গেডো অঞ্চলের কৃষি শহর বার্ধীরের কাছে হাম মহামারি থেকে বাঁচতে তৈরি একটি ক্যাম্পে শাল মুড়ে বসেছিলেন ৬১ বছরের বৃদ্ধ হাবিবা মাও ইমান। ক্যাম্পটি এখন উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে তিনি একজন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, টানা তিনটি বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরেনি। গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে হর্ন অফ আফ্রিকার এই অঞ্চল।

ডব্লিউএফপি বলছে, এপ্রিলে বৃষ্টি না হলে ইমানের মতো ৪ মিলিয়নেরও বেশি সোমালি টিকে থাকার জন্য খাবার খুঁজে পেতে লড়াই করবে।

কাপড় ও প্লাস্টিকের তৈরি একটি কুঁড়েঘরে সন্তানদের নিয়ে বাস করেন ইমান। তিনি বলেন, আমরা খরা থেকে পালিয়ে এসেছি। প্রতিদিন আমি বাইরে যাই এবং শিশুদের খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে শহরের প্রতিটি বাড়িতে নক করি।

সোমালিয়া গত এক দশকে একের পর এক বিপর্যয়কর খরার সম্মুখীন হচ্ছে। বৈশ্বিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই বছরও সেখানে বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুর্ভিক্ষ প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ সিস্টেম নেটওয়ার্ক (FEWS) সতর্ক করেছে যে, এই অঞ্চলটি আগামীতে আরও খারাপ খরার মুখোমুখি হতে পারে।

আবদুল্লাহি আবদো মোহাম্মদ বার্ধীরের ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য ছয় দিন ধরে গাধার গাড়িতে ভ্রমণ করেছিলেন। সঙ্গে অসুস্থ চার সন্তান। এরই মধ্যে তার এক মেয়ে মারা গেছে।

drought-somalia-
বার্ধীরের হাসপাতালে নারীর কোলে অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু- রয়টার্স

ডব্লিউএফপি এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এল-খিদির দালুম মাহমুদ বলেন, 'এই লোকেরা সবকিছু হারিয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ অন্যতম মানবিক যন্ত্রণা, তা ইউরোপ বা আফ্রিকা বা এশিয়া বা যেকোনো স্থানেই হোক না কেন।'

ডব্লিউএফপির একজন মুখপাত্র বলেন, এই বছরের বৃষ্টিপাত না হলে বছরের শেষ নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী ১.৪ মিলিয়ন শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগবে। 

এই মাসের শুরুতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল ও শীর্ষ বিশ্ব জলবায়ু বিজ্ঞান কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তাপপ্রবাহ, খরা এবং কিছু অঞ্চলে চরম বৃষ্টিপাত আগামী দশকগুলোতে আরও ঘন ঘন দেখা দেবে।

সূত্র: রয়টার্স

একে