images

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে ইমরান খান যা বললেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:২৪ পিএম

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে করেন, দেশটিতে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সরকার আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। কারণ, পাকিস্তানের অর্থনীতি ডুবে গেছে। এখান থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র উপায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্যথায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। এছাড়া তিনি আরও জানান, ‘নতুন সামরিক প্রধানের’ সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

বিবিসি উর্দুর সংবাদদাতা উসমান জাহিদ, ইমরান খানের একটি বিশেষ সাক্ষাত্কার নেওয়ার সময় তার সামনে প্রশ্ন রাখেন যে তিনি দেশটির অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত কিনা?

জবাবে ইমরান খান বলেন, এই সরকার কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। বরং তারা নিলামের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সংসদ সদস্যদের কেনা-বেচার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি ২০-২৫ কোটি রূপি দিয়ে এমপিদের ভোট ক্রয় করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন ইমরান খান।

এক্ষেত্রে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া শাহবাজ শরিফকে সমর্থন জুগিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ইমরান।

বাজওয়ার বিরুদ্ধে ১১০০ বিলিয়ন রূপি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে - একথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ডুবে গেছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এখান থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র উপায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

অন্যথায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে?

পাকিস্তানের কিছু রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ আগামী অগাস্ট মাসে সাধারণ নির্বাচন চায়। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা বারবার ঘোষণা করেছেন যে পার্লামেন্ট তার মেয়াদ শেষ করবে এবং অক্টোবরে নতুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ইমরান খান বলেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজন আইনের শাসনকে ভুলুন্ঠিত করেছে। তারা নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে রেখেছে। নিজেদের করা সব চুরি ও দুর্নীতি মাফ করে দিয়েছে।

শাহবাজ, নওয়াজ, জারদারি, মরিয়ম - সবাই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। তো এর চাইতে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? যত সময় যাবে, তাদের উদ্দেশ্য নিজেদের বিরুদ্ধে মামলা শেষ করা।

ইমরান খান বলেন, এই মুহূর্তে দুই মাস অনেক দূরে মনে হতে পারে। "আপনি অগাস্টের কথা বলছেন। কিন্তু আমি এখনকার কথা বলছি। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রিজার্ভ আছে মাত্র চার বিলিযন ডলার। বন্দরে পণ্য পড়ে আছে কিন্তু খালাস করা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

এমন অবস্থায় এই সরকার আরও দুই মাস কীভাবে পার করবে সে প্রশ্ন তোলেন পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তার ধারণা হচ্ছে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সরকার এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হবে কারণ ঠিক এক বছর আগে, একই মাসে পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছিল।

সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক নেই

সাধারণ মানুষের মতামত হলো, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সরকার অর্থনৈতিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এবং কিছু পর্যবেক্ষক দাবি করেছেন যে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রচারণা এই অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জবাবে ইমরান খান বলেন, গত সতের বছরের মধ্যে পাকিস্তানে তার সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য সবচেয়ে বেশি ছিলো।

"কেউ তাকে (সাবেক সেনাপ্রধান জেরেল বাজওয়া) জিজ্ঞেস করুক - কেন তিনি আমাদের সরকারকে উৎখাত করলেন?" তিনি প্রশ্ন তোলেন, তার সরকার কী এমন ভুল করেছিল যে তাদের টেনে নামানো হলো। আমি এবং শওকত তারিন (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) একসাথে জেনারেল বাজওয়াকে বলেছিলাম, আপনি যদি এই ষড়যন্ত্র সফল করতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন, তবে দেশের অর্থনীতি কেউ সামলাতে পারবে না। আর সেটাই হয়েছে।’

তিনি বলেন, তার সরকারের পতন ঘটানোর পরে বাজারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেছে। কারণ যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কোনো রোডম্যাপ নেই। জেনারেল বাজওয়া তাদের সঙ্গে যা করেছে, কোনো শত্রুও পাকিস্তানের সঙ্গে তা করতে পারেনি।’

ইমরান খানকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসীম মুনিরের সাথে তিনি এবং তার দলের সম্পর্ক কেমন?

জবাবে ইমরান খান বলেন, 'দেখুন, এখন আমাদের সঙ্গে নতুন সামরিক নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।'

তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান হিসেবে, ইমরান খান স্বীকার করেছেন যে তিনি অনেক বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু তালেবানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তার অবস্থান কমবেশি একই নীতিতে রয়ে গেছে। আর সেটি হলো, শান্তি, আলোচনা এবং পুনর্বাসন।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ