images

আন্তর্জাতিক

একবারেই খায় দুইশ মানুষের খাবার, সৃষ্টির রহস্য নীল তিমি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫৮ এএম

পৃথিবীর বৃহত্তম স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী হল নীল তিমি। এর সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। বিশাল এই প্রাণী অক্সিজেন নেয় মানুষের মতো ফুসফুস দিয়ে। তিমি তার শিশুকে দুধ খাওয়ায়। সৃষ্টির অপার রহস্য নীল তিমি সম্পর্কে চলুন অবাক করা তথ্য জেনে নিই।

তিমি পানিতে থাকলেও এটি আসলে মাছ নয়। বৈশিষ্ট্যের বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির তিমি রয়েছে। যেমন: কিলার তিমি, নীল তিমি, পাইলট তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, বেলুগা তিমি, ফিন তিমি, গ্রে তিমি ইত্যাদি।

একটি নীল তিমির ওজন প্রায় ২০০ টনের মতো। একটি নবজাতক তিমির ওজন প্রায় তিন টন। এর জিভের ওজনই একটি হাতির সমান। আর হৃৎপিণ্ড একটা প্রাইভেট কারের সমান। একটি নীল তিমির জিভে এত বড় যে এর ওপর একটি ফুটবল টিমের সবাই অনায়াসে দাঁড়াতে পারবেন।

big blue whale

স্তন্যপায়ী প্রাণী হলেও নীল তিমি থাকে পানিতে। তবে তাকে অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য একটু পরপর পানির ওপরে ভেসে উঠতে হয়। নীল তিমিকে পানির নিচে নীলই দেখায়। তবে পানির ওপরে ভেসে উঠলে দেখা যায় তার শরীর জুড়ে নীলচে ধূসর ছোপ।

বিশালায়তন নীল তিমি সাগরের গভীর পানিতে যখন একেঁবেঁকে সামনের দিকে চলতে থাকে, তখন এক গ্রাসেই এতমাছ খেয়ে ফেলতে পারে, দুইশ'জন মানুষের পক্ষেও সেই পরিমাণ মাছ খাওয়া সম্ভব নয়। এমনকী গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায়ও এরা খেতে পারে রাশিরাশি মাছ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এই বিষয়টি।

big blue whale

নীল তিমিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা সাধারণত 'ক্রিল' নামের অতিক্ষুদ্র এক ধরণের মাছ খেয়ে থাকে। খাবারের খোঁজে এরা যখন পানিতে ডুব দেয়, তখন প্রতিটি ডুবে সময় নেয় তিন থেকে পনেরো মিনিট। যদিও নীল তিমির শারীরিক গঠন এমন যে এরা চাইলেই প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন নিতে পারে। কিন্তু তারপরও বিশালাকার এই প্রাণীটি কেন এক ডুব দিয়ে বেশি সময় থাকতে পারে না।

প্রতি কামড়ে কতগুলো মাছ গোগ্রাসে গিলতে পারে তার হিসেব কষে গবেষকরা দেখেছেন, এরা একসঙ্গে ৮ হাজার ৩০৬ ক্যালরি থেকে শুরু করে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৫ ক্যালরি পর্যন্ত খেতে পারে। এরা সর্বোচ্চ যে পরিমাণ খেতে পারে তা দিয়ে ২২৮ জনেরও বেশি মানুষকে প্রতিদিন ২০০০ কিলো ক্যালরি খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, তিমিকে কেবল একবার এর শরীর নড়াচড়া করতেই নি:শেষ করতে হয় ৭৭০ কিলো ক্যালরি।

big blue whale

গবেষক বব শ্যাডউইক বলেছেন, 'এত বেশি ক্যালরি খেতে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়ে গেছি। তবে এটা তার বিশাল আকারের কারণেই। এদের গ্রাস এত বড় যে, একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেতে পারে। আর বিশাল শরীর নিয়ে চলতে গেলে এই পরিমাণ শক্তিতো খরচ করতেই হবে।'

নীল তিমিকে খুব কমই দল ধরে ঘুরতে দেখা যায়। সে বেশির ভাগ সময় একা ঘুরতেই পছন্দ করে। ঘণ্টায় পাঁচ মাইলের থেকে বেশি সাঁতার কাটে তারা। তবে যদি কোনো কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়, তবে সেটা ঘণ্টায় ২০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে।

big blue whale

প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে জোরে শব্দ করতে পারে নীল তিমি। তাদের শব্দের তীব্রতা প্রায় ১৮৮ ডেসিবল। মানুষের পক্ষে ১২০ থেকে ১৩০ ডেসিবলের বেশি শব্দ শোনা প্রায় অসম্ভব। এক তিমি অন্য তিমির শব্দ প্রায় ১০০০ মাইল দূর থেকে শুনতে পারে।

একটি নীল তিমির গড় আয়ু ৮০ থেকে ৯০ বছর। এখন পর্যন্ত ১১০ বছর বয়স্ক নীল তিমির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর প্রায় সব মহাসাগরে এরা রাজার মতো ঘুরে বেড়ায়।

blue whale

নীল তিমি অনেকটা জেগে থেকেই ঘুমায়। মানে সে কখনো পুরোপুরি ঘুমায় না। তার মস্তিষ্কের অর্ধেক ঘুমায়, বাকি অর্ধেক জেগে থাকে। কারণ হিসেবে মনে করা হয়, তিমি যদি ঘুমিয়ে পড়ে এবং সময়মতো না জাগে, তাহলে দম আটকে মারাও যেতে পারে।

অতিরিক্ত শিকারের কারণে বিশ্বব্যাপী নীল তিমির সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নীল তিমি এখন প্লাস্টিকও খাচ্ছে। সাগর প্লাস্টিকের ছোট ছোট দানায় ভরপুর হয়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। একটি নীল তিমি দিনে ৪৫ কেজির মতো প্লাস্টিক খাচ্ছে।

blue whale comparison

১৯ শতকের প্রথম দিকে প্রায় প্রত্যেক মহাসাগরে নীল তিমি দেখা যেত। এক শতকের ব্যবধানে শিকারিদের উৎপাতে এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে। ২০০২ সালের এক হিসাব মতে, সারা বিশ্বে অন্তত ১২ হাজার নীল তিমি রয়েছে। আইইউসিএন ধারণা করছে, বর্তমানে এর সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার।

সূত্র: রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, উইকিপিডিয়া

একে