আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০৪ পিএম
ভারতের উত্তরপ্রদেশের এক বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগীকে প্লাজমার বদলে মাল্টার (মোসাম্বী) রস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ডেঙ্গু রোগীর শরীরে মাল্টার রস ঢুকানোর কারণে তার মৃত্যুও হয়েছে।
ভারতে মোসাম্বী নামে পরিচিত লেবুজাতীয় এই ফলটিকে বাংলাদেশের মানুষ চেনে মাল্টা নামে। প্রয়াগরাজ জেলা (যার আগে নাম ছিলো এলাহাবাদ) সেখানকার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সময় এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
প্লাজমার প্যাকেটে মোসাম্বীর রস?
মৃত প্রদীপ কুমারের পরিবার দাবি করছে, প্লাজমার বদলে ড্রিপের মাধ্যমে মোসাম্বীর রস দেওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে একটা ভিডিও সামনে এসেছে, যেখানে এক ব্যক্তিকে বলতে দেখা যাচ্ছে যে রক্তের প্যাকেটে মোসাম্বীর রস রয়েছে।
এমন গুরুতর অভিযোগ সামনে আসার পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অফিসার হাসপাতালটি সিল করে দিয়েছেন।
চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তদন্তের নির্দেশ
উত্তরপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
টুইট করে ব্রজেশ পাঠক জানিয়েছেন, "প্রয়াগরাজ জেলার ঝালওয়ার গ্লোবাল হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় প্লেটলেটের বদলে মোসাম্বীর জুস দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে আমি হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। প্লেটলেটের প্যাকেটটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে পাঠক আরও জানিয়েছেন যে মুখ্য স্বাস্থ্য অফিসারের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা।"
রক্তের প্লেটলেট কমে ১৭ হাজার
মৃত প্রদীপ কুমারকে গত ১৭ই অক্টোবর গ্লোবাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ডেঙ্গুর চিকিৎসা চলছিল তার। কিন্তু দু’দিন পরে তার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু রোগীদের রক্তে প্লেটলেট সংখ্যা কমে গেলে তাকে প্লাজমা দিতে হয়।
কুমারের আত্মীয়রা দাবি করছেন, প্লাজমা আর মোসাম্বীর রঙ প্রায় একই ধরণের। দুটোই হাল্কা হলুদ রঙের।
তদন্তকারীরা এখন খোঁজ করছেন যে সত্যিই প্লাজমার প্যাকেটে মোসাম্বীর রস ছিলো কিনা।
আর তা যদি হয়ে থাকে, এত বড় ভুল কী করে হলো।
জাল ব্লাড ব্যাঙ্কের খোঁজ
পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল রাকেশ সিং ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, "ডেঙ্গু রোগীদের নকল প্লাজমা দেওয়ার ঘটনায় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
"তবে এখনও এটা স্পষ্ট নয় যে প্যাকেটে সত্যিই প্লাজমার বদলে মোসাম্বীর রস ছিলো কিনা। কিন্তু কয়েক দিন আগে একটা জাল ব্লাড ব্যাঙ্কের খোঁজ আমরা পেয়েছি।"
হাসপাতালের মালিক সৌরভ মিশ্র সংবাদ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, "ওই রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা ১৭ হাজারের কাছাকাছি নেমে গিয়েছিল। তার আত্মীয়স্বজনকেই আমরা প্লেটলেট নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তারা এসআরএন হাসপাতাল থেকে ৫ প্যাকেট প্লেটলেট নিয়ে এসে আমাদের দিয়েছিলেন।”
"কিন্তু ড্রিপের মাধ্যমে ওই প্লেটলেট দিতেই রোগীর শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ড্রিপ বন্ধ করে দিয়েছিলাম।"
সৌরভ মিশ্র বলেন, "প্লেটলেট আর সেটা যেখান থেকে আনা হয়েছিল, তদন্তটা সেখানে হওয়া দরকার। ওই প্যাকেটের গায়ে তো এসআরএন হাসপাতালের স্টিকার লাগানো ছিলো।”
তবে এসআরএন হাসপাতালের পক্ষ থেকে এখনও বিষয়টি নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সূত্র : বিবিসি
এমইউ