images

আন্তর্জাতিক

তবে কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াচ্ছে রাশিয়া?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৫ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৩ পিএম

টানা ২২৪ দিনে গড়ালেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো পূর্ব ইউক্রেনে সম্প্রতি এই সংঘাত আরও জোরদার হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে তুমুল গোলাবর্ষণ। তবে এতসবের মাঝেই নতুন এক দাঙ্গার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানোর মার্কিন সিদ্ধান্তকে নিয়ে চটেছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশটিকে এ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছে মস্কো।

সম্প্রতি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে ৬২৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এরপরই দেশটির ওপর ক্ষেপেছে রাশিয়া। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতলি আন্তোনভ বলেছেন, মার্কিনিদের এই সহায়তাকে ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ হিসেবে দেখছে মস্কো। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেন যুদ্ধের ‘একজন অংশগ্রহণকারী’ বলেও বর্ণনা করেছেন এই রুশ রাষ্ট্রদূত।

US Russiaবুধবার টেলিগ্রামে এক বার্তায় আন্তোনভ আরও বলেন, ‘আমরা এটিকে আমাদের দেশের কৌশলগত স্বার্থের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হিসাবে উপলব্ধি করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দ্বারা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ শুধুমাত্র দীর্ঘ রক্তপাত এবং নতুন হতাহতের জন্য নয়, রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলেছে।’

ইউক্রেনকে সহায়তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কয়েক দফায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের অত্যাধুনিক নানা অস্ত্র দেশটিকে দিয়েছে। যার সহায়তায় ইতোমধ্যেই ইউক্রেনীয় বাহিনী উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু অংশে রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে সক্ষমও হয়েছে। তবে সবশেষ ইউক্রেনের জন্য জো বাইডেনের ৬২৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন প্যাকেজ ঘোষণার পর রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Russia-ukraine Warগত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। এর দুদিন পর সোমবার (৩ অক্টোবর) ইউক্রেনের ওই চার অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমা। খোদ দুমার স্পিকার ভায়েচেস্লাভ ভোলোদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে সেদিন এই তথ্য জানান। সবশেষ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

যদিও রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের বলে ঘোষণা দিলেও রুশ বাহিনীকে পরাজিত করার প্রত্যয়ে এখনও অনড় ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই সঙ্গে দখলকৃত ওই অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্যে অতি দ্রুতই উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটে (ন্যাটো) যোগ দিতে চায় ইউক্রেন। এমনকি ইতোমধ্যেই ন্যাটোভুক্ত নয়টি দেশ ইউক্রেনকে জোটে নিতে সমর্থনও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা রাজধানী কিয়েভের জন্য সামরিক সহায়তা জোরদারের জন্যও ন্যাটোভুক্ত ৩০টি দেশকেই আহ্বান জানিয়েছেন।

Russia-Ukraine Warতবে সহসাই ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারবে না বলেও সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে হলে জোটের ৩০টি দেশেরই অনুমোদন লাগবে। তাই দেশটির সদস্যপদ খুব শিগগিরই পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া, যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কারণে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের আবেদন নিয়েও জটিলতা রয়েছে।

সে যাই হোক, সব বাধা পেরিয়ে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করার আগের সিদ্ধান্তে অনড় ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই সঙ্গে পুতিনের সঙ্গে কোনো আলোচনাও সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতেও স্বাক্ষরকালে জেলেনস্কি বলেন, মর্যাদা ও সততা কী, তা পুতিনের জানা নেই। আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে সেটি পুতিনের সঙ্গে নয় রাশিয়ার অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে।

এমতাবস্থায় বিশ্ব রাজনৈতিকদের আশঙ্কা, ইতোমধ্যেই রাশিয়ার দখল থেকে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি ভূমি পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন। ফলে তারা আরও ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করবে। আর রাশিয়াও চেষ্টা করতে ইউক্রেনের নতুন এলাকা দখলে নেওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে সহসাই এই সংঘাত থামছে না। তবে সামরিক সহায়তার বিষয়টি নতুন করে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা বিশ্ব রাজনৈতিকদের।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট।

/আইএইচ