images

আন্তর্জাতিক

চুড়ি বিক্রেতা থেকে যুগ্মসচিব, কেমন ছিল যাত্রা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০২ অক্টোবর ২০২২, ০১:৩৫ পিএম

আমরা অনেকেই অল্পেতে হাল ছেড়ে দিই। কোনো লক্ষ্য পূরণ না হলেই চেপে বসে হতাশা। মনে হয়, এটা হয়তো আমার দ্বারা সম্ভবই হবে না। এমন মানুষদের জন্য শিক্ষণীয় ভারতের ঝাড়খণ্ডের রমেশ ঘোলাপ। বিশেষভাবে সক্ষম চুড়ি-বিক্রেতা যুবকের ইন্ডিয়ান এডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস (আইএএস) অফিসার হয়ে ওঠার গল্প, আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

গত বছরই ইউপিএসসি ক্র্যাক করে, তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রমেশ। এখন তিনি ঝাড়খণ্ডের শক্তি দফতরের যুগ্মসচিবের পদে কর্মরত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা সংস্করণ এই সময়ে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

রমেশ ঘোলাপের ছোটবেলা কেটেছে প্রবল অনটনে। বাবা গোরখ ঘোলাপ একটা সাইকেল সারানোর দোকান চালাতেন। কিন্তু, মদ্যপানের নেশার কবলে পড়ে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। রমেশ যখন স্কুলপড়ুয়া, তখনই একদিন মৃত্যু হয় বাবার। 

এরপর সংসার চালাতে গ্রামে গ্রামে চুড়ি বিক্রি শুরু করেন তার মা বিমলা। রমেশ ও তার ভাইও তখন মায়ের সঙ্গে চুড়ি বিক্রি করতেন ঘুরে ঘুরে। কষ্ট যে শুধু আর্থিক অনটনের ছিল, তাই নয়। ছোটবেলাতেই পোলিওর আঘাতে রমেশের বাঁ পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিন্তু, যার মনোবল অদম্য, কোনো বাধাই তাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। অনটন এবং শারীরিক অক্ষমতা রমেশকে বেঁধে রাখতে পারেনি। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি মহারাষ্ট্রের বারশিতে তার কাকার কাছে চলে যান।

প্রথমে আর্থিক অনটনের জন্য এডুকেশনে একটা ডিপ্লোমা কোর্সের বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি রমেশ। এরপর ২০০৯ সালে তিনি একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক হন। তারপর শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। 

কিন্তু, আকাশ-ছোঁয়ার স্বপ্ন যিনি দেখেছেন, সেই রমেশ এখানেও থিতু হননি। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেন মা। শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে সেই টাকায় ভরসা করে পুণে চলে যান রমেশ। উদ্দেশ্য ছিল, ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে ইউপিএসসিতে বসা। রমেশের সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে তার একজন শিক্ষকের কথা তুলে ধরেছেন রমেশ ঘোলাপ। সেই শিক্ষকের একটা কথা আজও তার মনে গেঁথে রয়েছে। রমেশের কথায়, 'ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে, প্রথম যে শিক্ষকের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তার নাম অতুল লান্ডে। আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম যে ইউপিএসসি নিয়ে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতে। জানতে চেয়েছিলাম যে ইউপিএসসি কী, মারাঠিতে পরীক্ষা দেওয়া যায় কিনা, আমি যোগ্য কিনা, এমন সব প্রশ্ন। তিনি শুধু বলেছিলেন, এমন কোনোকিছুই নেই যা তোমাকে পরীক্ষা দেওয়া থেকে আটকাতে পারে। ওই একটা বাক্যে ভরসা রেখেই আমি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলাম।'

একে