images

আন্তর্জাতিক

রিজার্ভ দিয়ে মাত্র ৬ মাস চলতে পারবে নেপাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৯ আগস্ট ২০২২, ১১:২৫ এএম

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে নেপালেও। জুন মাসে হিমালয়ের দেশটির খুচরা বাজারে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ পৌঁছেছিল ৮.৫৬ শতাংশে। গত ছয় বছরের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। এক বছর আগেও নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে সেটি প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে টেনেটুনে আগামী ছয় মাসের জন্য আমদানির খরচ উঠতে পারে। 

তবে এরপরও নেপালের দশা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলেই দাবি করছে সেই দেশের সরকার। এমনকি, এই টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেই আগামী নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টিভি নাইন বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার এবং মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি নেপাল ব্যাপক ঋণের ঘাটতিতে পড়েছে। প্রায় সব ব্যাংকের ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে গ্রাহকরা ঋণ পাচ্ছেন না। তার মধ্যেও আমানতের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। 

সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাজেট ব্যবহার করতে পারছে না। তারপরও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় পড়বে না বলে দাবি করেছে দেশটি। তাদের দাবি, বর্তমানে নেপালে পর্যটন শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি রেমিটেন্সের পরিমাণও বাড়ছে। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মতো বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে পড়েনি কাঠমান্ডু। 

এই সকল বিষয়ই ভারত ও চীনের মতো দুই বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে থাকা ছোট্ট দেশটিকে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচাতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে।

নেপাল সরকারের দাবি, সরকার এবং নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার স্থিতিশীল করার জন্য সক্রিয় আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার উদ্বেগজনক হলেও, তা সামলে ওঠার মতো ক্ষমতা রয়েছে তাদের। 

শের বাহাদুর দেউবার সরকারের দাবি, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে নেপালের কোনো উদ্বেগ নেই, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেই তা পূরণ করা যেতে পারে। তাছাড়া, নেপাল বিদেশি ঋণ নিয়েছে নামমাত্র সুদের হারে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের চুক্তিতে। তাই তা পূরণ করতে গিয়ে অবিলম্বে বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

nepal economy

কাঠমান্ডু বলছে, গত দুই মাসে রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে। চল্লিশ লাখেরও বেশি নেপালি বিদেশে কাজ করেন। তারা দেশে যে অর্থ পাঠান, তাই নেপালের বিদেশি মুদ্রার প্রাথমিক উৎস। আগামী কয়েক মাসেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া মহামারি পরিস্থিতি উন্নতির ফলে পর্যটন শিল্পেও প্রভূত উন্নতি হয়েছে। পর্যটন শিল্প নেপালের বিদেশি অর্থের আরেকটি মূল উৎস। করোনার পর নেপালে ফিরতে শুরু করেছেন বিদেশি পর্যটকরা। তবে, এই দুইভাবে তৈরি বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানিতে নষ্ট না হলে নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি মিটবে না। তাই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমদানি ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। 

নেপালের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিলাসবহুল পণ্যগুলোর বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু কিছু বিলাসবহুল পণ্য রয়েছে যা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। যেমন বিদেশি মদ। নেপালের জন্য বিদেশি মদ বিলাসবহুল পণ্য হলেও, বিদেশি পর্যটকরা নেপালে থাকার সময়ও তাদের পরিচিত অ্যালকোহলের স্বাদ পছন্দ করেন। তাই আদতে বিদেশি অ্যালকোহল আমদানি করলে বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি হবে না।

পাশাপাশি তারা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত সরকারের। তাতে আগামী কয়েক বছরে পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর নির্ভরতা কমবে। এছাড়া, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে উৎপাদিত অতিরিক্ত শক্তি প্রতিবেশি দেশগুলিতে রফতানি করেও বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যেতে পারে। 

খাতায় কলমে এই ব্যবস্থাগুলো অবশ্যই কার্যকর মনে হতে পারে। বাস্তবে তা কতখানি কাজে দেবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরই মধ্যে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে জনগণ কোন পথে হাঁটবে ও কাদের ওপর দেশের দায়িত্ব দেবে তা সময়ই বলে দেবে।

একে