আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৫৮ এএম
ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতে পরিণত হতে পারে এ সংঘাত। যুদ্ধের প্রসার ঘটলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ইউরোপে। তবে বাদ যাবে না বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়াও।
ইউক্রেন সংকটে এশিয়ায় ঘটতেও পারে নতুন মেরুকরণ। সম্ভাবনা রয়েছে খাদ্যপণ্যের যোগান সংকটের। আকরিক সরবরাহ ব্যাহত হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে ভারী শিল্প। পুঁজিবাজারের ধস হাতছানি দিচ্ছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের।
রুশ-ইউক্রেন সংকট যতই ঘনীভূত হবে এশিয়ার খাদ্য সংস্থান ব্যবস্থা ততই ভাঙতে শুরু করবে।
পূর্ব এশিয়ায় রুশ স্ফুলিঙ্গ?
পূর্ব এশিয়া ভৌগলিকভাবে রাশিয়ার অত্যন্ত নিকটে। অঞ্চলটির অন্যতম শক্তি জাপানের সাথে রাশিয়ার সরাসরি বিরোধ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যবর্তী কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আপাতত সুপ্ত রয়েছে। দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাশিয়ার হাতে। পশ্চিমা মদদপুষ্ট দক্ষিণ কোরিয়াও রয়েছে অঞ্চলটিতে।
তবে পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়ার শক্তি সীমিত। আবার পূর্ব এশিয়ার সীমানা পূর্ব ইউরোপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থির। ফলে এই অঞ্চলটিতে কুরিল নিয়ে রাশিয়ার একমাত্র ‘হিমায়িত দ্বন্দ্ব’ অপরিবর্তিত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
পূর্ব এশিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার পরম মিত্র চীন। অঞ্চলটির পূর্ব চীন সাগরে সংঘাত রয়েছে চীন এবং তাইওয়ানের। রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলার পর শঙ্কিত হয়েছিল তাইওয়ান। একইরকম যুক্তিতে ‘বাইরের শক্তি’ তাইওয়ানেও হামলা চালাতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। ‘বাইরের শক্তি’ বলতে রাশিয়ার মিত্র চীনের দিকেই ইঙ্গিত করছেন সাই।
আবার পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়ন রয়েছে পূর্ব তিমুরের। আর চির বৈরী উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ইউক্রেন আগ্রাসন পথ প্রদর্শক হলেও হতে পারে।
খাদ্যপণ্য সংকট
ইউক্রেন সংকটের প্রভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া। সংকটের আগুন ছড়িয়ে যাবে খাদ্য সংস্থানে। ইতোমধ্যে বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। ফলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ভারত, ক্রমবর্ধমান উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশসহ এশিয়ার একাধিক দেশ চরম অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
আবার এশিয়ার সূর্যমুখী তেল আমদানির বৃহৎ অংশ আসে ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেন প্রতিবছর প্রায় ১৭০ লাখ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন করে। ভোজ্য তেলের প্রধান এ উপাদানের আরেক বৃহৎ উৎপাদক রাশিয়া, উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫৫ লাখ টন।
ফলে বিকল্প উৎস হতে জ্বালানি এবং ভোজ্য তেলের যোগান নিশ্চিতে বাড়তি ব্যয় নির্বাহ করতে হবে এশিয়ার দেশগুলোকে। তেল আমদানির ব্যয় বৃদ্ধি সরাসরি আঘাত হানবে এশিয়ার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাজারে। একই ভাবে রাশিয়ার গম আর ইউক্রেনের ভুট্টা বঞ্চিত হতে যাচ্ছে এশিয়া। অচিরেই কৃষিপণ্য উৎপাদনে পড়বে এর প্রভাব।
রুশ-ইউক্রেন সংকট যতই ঘনীভূত হবে এশিয়ার খাদ্য সংস্থান ব্যবস্থা ততই ভাঙতে শুরু করবে।
ঝুঁকিতে ভারী শিল্প
রুশ-ইউক্রেন সংকটে ঝুঁকিতে রয়েছে এশিয়ার শিল্প খাত। ভারী শিল্পখাতের প্রধান তিন কাঁচামাল তামা, অ্যালুমিনিয়াম আর কোবাল্টের বড় যোগানদাতা রাশিয়া। ইউক্রেন আক্রমণের শাস্তি প্রসূত নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ বন্ধ হবে এসব কাঁচামালের। আবার খনি থেকে উত্তোলিত এসব ধাতুর বিকল্প উৎস সন্ধান অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিশোধিত নিকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নরনিকেলও রাশিয়ার মালিকানাধীন। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা এর প্রধান গ্রাহক। দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি রয়েছে এশিয়ার দেশ ভারত এবং চীনের একাধিক দেশের সঙ্গে। ফলে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় এশিয়ার ভারী শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সূত্র: জাপান টাইমস, ডয়েচে ভেলে
টিএম