আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০২ পিএম
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার জন্মস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে। ঢাকা থেকে প্রায় ৪৩৪ কিলোমিটার দূরের শহরটির মানুষ কাঁদছেন বাংলাদেশের এই আপসহীন নেত্রীর জন্য।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালে, অবিভক্ত ভারতের দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে। বাবা ইসকান্দার আলি মজুমদারের চায়ের ব্যবসা ছিল সেখানে। সেই জলপাইগুড়িতে এখনো উজ্জ্বল খালেদা জিয়ার শিশুকালের স্মৃতি। তার মৃত্যু সেখানকার মানুষও স্বজন হারানো বেদনা সইছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৫ সালে জলপাইগুড়িতে জন্ম হয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। সেখানে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষাও শুরু করেন। কিন্তু তার বাবা পরবর্তীতে পরিবারসহ বাংলাদেশে চলে আসেন।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী নীলাঞ্জন দাসগুপ্ত টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বাবা মোহাম্মদ ইস্কান্দার আমার বাবার চা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাস অ্যান্ড কো-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। খালেদা জিয়া তাদের নয়াবস্তির বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায় তার পরিবার।’
জলপাইগুড়িভিত্তিক ইতিহাসবিদ উমেশ শর্মা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল এ শহরে। তাকে নয়াবস্তি এলাকার যোগমায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সেখানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর তাকে সমাজ পাড়ার সুনিতিবালা সদর গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ওই সময় তার পরিবারের অনেকে (তৎকালীন) পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। খালেদা জিয়ার বাবাও পরে চলে যান।’
খালেদা জিয়া যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটি এখনো আছে বলে জানিয়েছেন এ ইতিহাসবিদ। কিন্তু বাংলাদেশে চলে আসার আগে খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মির্জা অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পরিবারের কাছে তার সম্পত্তি বিক্রি করে চলে আসেন। নয়াবস্তির সেই বাড়িতে এখনো চক্রবর্তী পরিবার বসবাস করেন।
দাস অ্যান্ড কো-এর স্বত্বাধিকারী দাসগুপ্ত আরও জানিয়েছেন, শিশু নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিওন মণ্ডল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনগুওলোতে খালেদা জিয়ার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি যখন প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন তখন সিয়ন মন্ডল খুব খুশি হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এখনো মনে আছে সিয়ন দিদি কতটা খুশি হয়েছিলেন যখন খালেদা জিয়া প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। যারা তাকে চেনেন তার মৃত্যুতে সবাই ব্যথিত হয়েছেন।’
শুহরিদ মন্ডল নামে আরেক ব্যক্তি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবার জলপাইগুড়িতে প্রায়ই তার জন্মস্থান দেখতে আসতেন। তারা সবাই আমার বাড়িতে উঠতেন। তার এক আত্মীয় মাত্র কয়েক মাস আগে তার জন্মস্থান দেখতে এসেছিলেন। দেশ যদি কখনো ভাগ না হতো তাহলে কত ভালো হতো, আমরা এ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করতাম। যদিও আমি খালেদা জিয়াকে সরাসরি কখনো দেখিনি। তবে তাকে আপন মনে হতো। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের পাশাপাশি এখানকার মানুষও শোক প্রকাশ করছেন।’
সুনিতিবালা নামে যে স্কুলে খালেদা জিয়া পড়াশোনা করেছেন ওই স্কুলের প্রাথমিক শাখার প্রধান শিক্ষক অরূপ দে বলেছেন, ‘আমি জেনেছি খালেদা এখানকার শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্লাস শুরু হলে আমরা একটি শোক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।’
প্রতিবেশীরাও সীমান্ত এবং দশকের পর দশক ধরে টিকে থাকা বন্ধনের কথা বলেছিলেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
সূত্র: এনডিটিভি