আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র-জাপানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপভূখণ্ড তাইওয়ানের চারপাশে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড তাইওয়ান প্রণালী, দ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব দিকে মোট ৫টি মেরিটাইম অ্যান্ড এয়ারস্পেস জোনে ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামে এই মহড়া পরিচালনা করবে। এতে যোগ দিয়েছে দেশটির দূরপাল্লার রকেট বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান এবং ড্রোন (ইউএভি) ইউনিট। তবে মহড়ার সময়কাল সম্পর্কে কোনও বিস্তারিত তথ্য দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ।
ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র শি ইয়ে বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে তাইওয়ান দ্বীপের কাছাকাছি আসা শত্রু জাহাজ ও বিমান মোকাবেলা এবং সুনির্দিষ্ট আক্রমণ পরিচালনার জন্য পিএলএ-এর ক্ষমতা পরীক্ষা করার লক্ষ্যে এই মহড়াগুলো পরিচালিত হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ অস্ত্র সহায়তা হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন তাইওয়ানের কাছে ১১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণার পরপরই চীনের এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পিএলএ কর্মকর্তা শি বলেন, এটি ‘তাইওয়ান স্বাধীনতা’ চাওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি কঠোর সতর্কীকরণ এবং চীনের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য একটি বৈধ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক বিবৃতি বলেছেন, ‘চীনকে দমন করতে এবং তাইওয়ানকে অস্ত্র দেওয়ার বহিরাগত শক্তির (যুক্তরাষ্ট্র-জাপান) প্রচেষ্টা কেবল তাইওয়ানের স্বাধীনতাজাওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই উৎসাহিত করবে এবং তাইওয়ান প্রণালীকে সামরিক সংঘাতের বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।’
‘চীনের মূল স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে তাইওয়ান রয়েছে’ উল্লেখ করে মুখপাত্র আরও বলেন, সীমা অতিক্রম করার যেকোনো পদক্ষেপ চীনের কাছ থেকে দৃঢ় আঘাতের মুখোমুখি হবে।
মূলত স্বশাসিত তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে চীন।
গত সপ্তাহে তাইওয়ানের কাছে প্রায় ১১ বিলিয়ন বা ১১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি তাইওয়ানকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ অস্ত্র সহায়তা, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত রকেট লঞ্চারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র।
একই সময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, চীন যদি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় তবে জাপানের সেনাবাহিনী জড়িত হতে পারে।
বেইজিংয়ের দাবি, তাইওয়ানের অস্ত্র কেনার মাধ্যমে ‘তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তবে সোমবার সকালে চীনা সামরিক বাহিনী তাদের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের কথা উল্লেখ করেনি।
তাইওয়ানের নিন্দা
চীনের এই মহড়ার নিন্দা জানিয়ে তাইওয়ান বলছে, তাদের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে চীনের এই সামরিক মহড়াকে ‘একতরফা উস্কানি’ বলে অভিহিত করেছে, যা এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা চীনের এই অযৌক্তিক উস্কানির তীব্র নিন্দা জানাই এবং আঞ্চলিক শান্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করি। অবিলম্বে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত।’
সূত্র: এপি, আনাদোলু
এমএইচআর