আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানে সঙ্গে চার দিনের সংঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুরের’ জেরে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য ৮ মাস পর স্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। ভারতের চালানো এই অভিযানের পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ নূর খান বিমান ঘাঁটির গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
গত শনিবার রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দার বলেন, ‘নূর খান বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে মাত্র ৩৬ ঘণ্টায় ৮০টি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল ভারত। তবে ৮০টি ড্রোনের মধ্যে ৭৯টিই পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছিল, মাত্র একটি আঘাত হেনেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত ১০ মে ভোরে নূর খান বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করে ভুল করে। যার ফলে পাকিস্তান প্রতিশোধমূলক পাল্টা অভিযানের (অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস) সিদ্ধান্ত নেয়।’
UAE is set to buy shares in the Pakistan Army backed Fauji Foundation to help Islamabad repay $1B. FM Ishaq Dar says a $2B debt rollover is secured, linked to the UAE President’s Dec 26 visit, talks at Nur Khan Air Base, and his Rahim Yar Khan trip pic.twitter.com/74oyGLHCnC
— Wahida 🇦🇫 (@RealWahidaAFG) December 27, 2025
প্রসঙ্গত, রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নূর খান বিমান ঘাঁটিকে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূণ ঘাঁটি বলে মনে করা হয়।
এর আগে অপারেশন সিঁদুরের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো তথ্য দেয়নি পাকিস্তানের সরকার। ইসহাক দারের এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এ ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে ইসলামাবাদ।
বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার আরও জানান, ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে ভারতকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়নি, বরং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান নয়াদিল্লির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে মধ্যস্ততা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ১০ মে ভোরবেলায় নূর খান বিমান ঘাঁটিতে হামলার পর সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে রুবিও তাকে টেলিফোন করে তাকে জানান যে ভারত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত এবং নয়াদিল্লি জানতে চায় যে পাকিস্তানও যুদ্ধবিরতিতে রাজি কি না। জবাবে ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললাম, যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা পাকিস্তানের নেই’।
তিনি আরও বলেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল পরে ভারতের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পরবর্তীতে নিশ্চিত করেন যে নয়াদিল্লি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
দার আরও দাবি করেন, ৭ মে বিমান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সাতটি ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু–৩০ ও অন্যটি মিগ–২৯ যুদ্ধবিমান ছিল। ভারত প্রথম দিকে এ বিষয়ে চুপ ছিলো। তবে সম্প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও গত ৭ মে ভোরে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায় ভারত। ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ পরিচালনা করে পাকিস্তান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতিতে যায় দুই দেশ। তবে ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করে আসছে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, যুদ্ধ বন্ধে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যেখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না, এমনকি ট্রাম্পেরও কোনো কৃতিত্ব নেই।
সূত্র: এএফপি/এনডিটিভি
এমএইচআর