images

আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির চানক্যপুরীতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দল। এসময় বিক্ষুব্ধরা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় এবং ‘বাংলাদেশ মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। 

মঙ্গলবার এই বিক্ষোভ শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বাজরং দলসহ হিন্দু সংগঠনগুলো। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে তরুণ হিন্দু শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং মরদেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় তারা। 

স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশন ভবন থেকে ৮০০ মিটার দূরে আটকে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের ‘শক্তিশালী ফোর্স’ মোতায়েন করা হয়েছে। 

image

ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশনে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য সরকারি বেশ কিছু বাস ‘বাধা হিসেবে’ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। 

এনডিটিভি জানায়, বিক্ষোভের খবরে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভবনের বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এলাকাটি তিন স্তরের ব্যারিকেডিং দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ব্যারিকেড ভেঙে কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে।

এরআগে গত শনি ও রোববার (২০ ও ২১ ডিসেম্বর) দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পরপর দুদিনই হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রায় দুই শতাধিক দুষ্কৃতিকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বাংলাদেশবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সংঘবদ্ধভাবে হাইকমিশনে হামলা চালায়।

দুই দফা হামলার জেরে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে দেওয়া সব ধরনের সেবা ও ভিসা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

India
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দল।

এদিকে একই ইস্যুতে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এসময় বিক্ষোভকরীরা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। 

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এভিবিপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে বাংলাদেশের উপদূতাবাস এলাকায় জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী। তবে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে পৌঁছোনোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতেই রণক্ষেত্রে চেহারা নেয় বেকবাগান এলাকা। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। পরে বিক্ষোভকারীদের অনেককে টেনেহিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। অনেক বিক্ষোভকারীকে দেখা যায়, প্রিজন ভ্যানের ছাদের ওপর উঠে পড়তেও।

এরআগে কলকাতার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন রাখতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান শুভেন্দু অধিকারী।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করে হিন্দুত্ববাদী বেশ কয়েকটি  সংগঠন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশের উপদূতাবাসে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। তবে পুলিশি বাধায় দূতাবাসের কাছে পৌঁছাতে পারেনি, এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীও রাস্তায় বসে পড়েছিলেন। 

এ সময় তিনি ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দীপুকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশনকে এখানে থাকতে দেব না। তাদের এটি তালাবদ্ধ করতে হবে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর সীমান্তে এক ঘণ্টার প্রতীকি অবরোধ হবে এবং ২৬ ডিসেম্বর আমরা আবারও এখনো জড়ো হবো।’

এমএইচআর