images

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড ‘লাগবেই’ বলছেন ট্রাম্প, ক্ষুব্ধ ডেনমার্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম

গ্রিনল্যান্ডের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর্কটিকের বিশাল দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাগবে’ উল্লেখ করে সেটিকে নিজেদের অংশ হিসেবে যুক্ত করার কথা পুনরায় বলেছেন তিনি।

গ্রিনল্যান্ডের জন্য বিশেষ দূত হিসেবে লুইজিয়ানা রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রির ভূমিকা নিয়ে বিবিসির করা এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘জাতীয় সুরক্ষার জন্য’ আমেরিকার গ্রিনল্যান্ডের প্রয়োজন এবং ‘আমাদের এটি পেতেই হবে’।

তিনি বলেন, ডেনমার্ক রাজ্যের একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অংশ গ্রিনল্যান্ডে বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্বের নেতৃত্ব দেবেন ল্যান্ড্রি।

এদিকে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে কোপেনহেগেন। তারা জানিয়েছে, এ পদক্ষেপের ব্যাখ্যা চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

ল্যান্ড্রির নিয়োগকে ‘খুবই বিরক্তিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন এবং ওয়াশিংটনকে ডেনিশ সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও সতর্ক করেছেন তিনি।

ডেনিশ সম্প্রচারমাধ্যম টিভি টু-কে তিনি বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ডেনমার্ক, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ডের সমন্বয়ে একটি রাজ্য থাকবে, ততক্ষণ আমরা এমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি না - যা আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ণ করে।’

প্রসঙ্গত, প্রায় ৫৭ হাজার জনসংখ্যার গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সাল থেকেই স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে। তবে, প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখনও ডেনিশদের হাতেই রয়েছে।

জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকেই, গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের কথা উল্লেখ করে, সেটিকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার তার দীর্ঘদিনের পুরনো ইচ্ছার বিষয়টি আবারও সামনে আনেন ট্রাম্প। এমনকি দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমাদের এটা সমাধান করতে হবে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড দরকার, খনিজ সম্পদের জন্য নয়।’

ট্রাম্প বিশেষভাবে নিকটবর্তী সমুদ্রে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে চীনা এবং রাশিয়ান জাহাজের কথা উল্লেখ করেছেন।

জনমত জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের বেশিরভাগ বাসিন্দা ডেনমার্ক থেকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার পক্ষে। একই সঙ্গে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ারও তীব্র বিরোধিতা করেছে।

যদিও তারা এমন অবস্থান হতবাক করেছে ডেনমার্ককে। কারণ ন্যাটোর এই মিত্র দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই বজায় রেখে চলেছে।

এ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন বলেছেন, এই অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক, তবে কেবল পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।

তিনি বলেন, ‘একজন বিশেষ দূত নিয়োগে আমাদের কিছুই পরিবর্তন হবে না। আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করি। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর, এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে।’

গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে সরব ইউরোপিয় ইউনিয়নও। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ করা একটি পোস্টে ইইউ কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, ইইউ ‘ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে।’

এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ল্যান্ড্রি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড কতটা অপরিহার্য এবং তিনি মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা যে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক থেকে আলাদা এবং নতুন করে বিশেষ দূত নিয়োগের মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি দ্বীপটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে সাহায্য করবেন।

রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়টি সরকারি কূটনীতিকদের মতো নয়, এটি অনানুষ্ঠানিক এবং তাদের নিয়োগের জন্য আয়োজক দেশের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হয় না। এ নিয়োগের মাধ্যমে এটি স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনও অক্ষুণ্ণই রয়ে গেছে।

এদিকে আর্কটিক অঞ্চলে কৌশলগত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ল্যান্ড্রির নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। অঞ্চলটিতে বরফ গলে নতুন জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি হচ্ছে এবং মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণের সুযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত, যা এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটোর নিরাপত্তা পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই গ্রিনল্যান্ডে একটি সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংঘাতের সময় ডেনমার্ক দখল করার পর নাৎসিরা পুরো ভূখণ্ড জুড়ে সামরিক ও রেডিও স্টেশন স্থাপনের জন্য আক্রমণ চালায়।

গত মার্চে ওই সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি গ্রিনল্যান্ডের জনগণকে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি করতে" বলেছিলেন।

১৯৫৩ সালে বন্ধ করে দেওয়ার পর, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুউকে একটি কনস্যুলেট পুনরায় চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইউরোপিয় দেশেরও সম্মানসূচক জেনারেল কনস্যুলেট রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে।বিবিসি বাংলা 

এমএইচআর