আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৮ এএম
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারের পিছু নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে এই অভিযান জোরদার করছে ওয়াশিংটন।
রোববারের এই অভিযানটি আসে এমন এক সময়, যখন তার আগের দিন ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড দ্বিতীয় একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে আরোপিত ‘নৌ অবরোধের’ অংশ হিসেবে গত দুই সপ্তাহে এ নিয়ে দুটি জাহাজ জব্দ করা হলো। সূত্র: আল জাজিরা।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা জানান, কোস্টগার্ড এখনো জাহাজটির পিছু অনুসরণ করছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, জাহাজটি ভেনেজুয়েলার তথাকথিত ‘ডার্ক ফ্লিট’-এর অংশ, যা দেশটির তেল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জাহাজটি ভুয়া পতাকা ব্যবহার করছিল এবং এটি আদালতের জব্দের আদেশের আওতায় রয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, ট্যাংকারটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও এখনো সেটিতে ওঠা হয়নি। ওই কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের অভিযান বিভিন্নভাবে পরিচালিত হতে পারে-যেমন সন্দেহভাজন জাহাজের খুব কাছ দিয়ে নৌযান বা উড়োজাহাজ চলাচল।
অভিযানটি ঠিক কোন এলাকায় চলছে বা জাহাজটির নাম কী-এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি। তবে ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ভ্যানগার্ড জানিয়েছে, জাহাজটির নাম ‘বেলা’১। এটি একটি বৃহৎ অপরিশোধিত তেলবাহী ট্যাংকার, যা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়। ওই তালিকায় জাহাজটির সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্যাংকার ট্র্যাকার্স ডটকম জানিয়েছে, রোববার ভেনেজুয়েলার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় জাহাজটি খালি ছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালে এই জাহাজটি ভেনেজুয়েলার তেল চীনে পরিবহন করেছিল। একই সঙ্গে জাহাজ পর্যবেক্ষণ সেবার তথ্য অনুযায়ী, এটি অতীতে ইরানি অপরিশোধিত তেলও বহন করেছে।
ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে এই অভিযান এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন মাদক পাচার দমনের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের আশপাশের প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরে দুই ডজনের বেশি অভিযানে সন্দেহভাজন মাদকবাহী জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে। এসব অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। তাদের দাবি, এসব হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুতের দখল নিতে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে তারা ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা প্রথম দুটি তেলবাহী ট্যাংকার কালোবাজারে তেল পরিবহন করছিল এবং নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করছিল।
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেট সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, এসব জাহাজ জব্দের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়বে’ এমন আশঙ্কার কারণ নেই।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির লাতিন আমেরিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আর্নেস্তো কাস্তানেদা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে। তার মতে, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো বাস্তব হুমকি নয়। তবে সংঘাত তৈরি হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগের সুযোগ পেতে পারেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি অভিবাসী বহিষ্কারের পথ তৈরি করতে পারে।
এমআর