আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
তোশাখানা–২ মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের পর দেশজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান।
একই সঙ্গে তিনি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আদালত রায় ঘোষণার পর ইমরান খান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এই বার্তা দেন।
কারাগারে থাকায় তিনি বর্তমানে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ব্যবহার করতে পারছেন না।
আইনজীবীর সঙ্গে কথোপকথনের বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশ করে জানানো হয়, ইমরান খান খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদিকে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য পুরো জাতিকে জেগে উঠতে হবে।
ইমরান খান বলেন, এই মামলায় সাজা তার কাছে নতুন কিছু নয়। তিনি জানান, আইনজীবীদের ইতোমধ্যে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভাষায়, গত তিন বছরে যেসব ভিত্তিহীন রায় ও সাজা দেওয়া হয়েছে, তোশাখানা–২ মামলার রায়ও তার ব্যতিক্রম নয়।
কোনো প্রমাণ ছাড়াই এবং আইনি প্রক্রিয়া পূরণ না করেই তড়িঘড়ি এই রায় দেওয়া হয়েছে। আমাদের আইনজীবীদের কথা শোনাও হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আইনের শাসন ও সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইনসাফ লইয়ার্স ফোরাম ও আইনজীবী সমাজের সামনে আসা এখন অনিবার্য। ন্যায়বিচার ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এক বিবৃতিতে পিটিআই এই রায়কে চরম অসাংবিধানিক, অবৈধ, বিদ্বেষপ্রসূত এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধের জঘন্য উদাহরণ বলে অভিহিত করেছে।
দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, ইমরান খানের কারাবাস দীর্ঘায়িত করতেই এই সাজা দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে একটি ভীত সন্ত্রস্ত ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে।
পিটিআইয়ের দাবি, পাকিস্তানে আইনের শাসনকে কবর দেওয়া হয়েছে এবং একটি অনুগত বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে।
পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতা আসাদ কায়সারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা জানান, আদালতে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার সালমান সাফদারের সঙ্গে ইমরান খানের সাক্ষাৎ হয় এবং সেখান থেকেই জাতির উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ইমরান খান স্পষ্টভাবে বলেছেন— আমি দৃঢ় অবস্থানে আছি। কোনো পরিস্থিতিতেই আমি কারও কাছে ক্ষমা চাইব না।
সালমান আকরাম রাজা অভিযোগ করেন, মামলাটি কেবল প্রতিশ্রুতিপত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, তাদের কোনো সাক্ষী নেই, শুধু একজন ব্যক্তি—যাকে ইমরান খান নিজেই সামনে এনেছিলেন।
তিনি মামলাটিকে দুর্বলতম সাক্ষ্যের ওপর দাঁড়ানো একটি হাস্যকর মামলা বলে মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে আসাদ কায়সার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। তবে এই প্রতিরোধ হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং সংবিধানসম্মত। তিনি বলেন, পিটিআই তার প্রতিষ্ঠাতার ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাবে।
পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াকাস আকরাম অভিযোগ করেন, রায় ঘোষণার সময় ইমরান খানের পরিবারকেও কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং সেখানে একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ রায় দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একই অভিযোগে দ্বিতীয়বার সাজা দেওয়া সংবিধান, ফৌজদারি আইন এবং আন্তর্জাতিক ‘ডাবল জিওপার্ডি’ নীতির লঙ্ঘন বলেও দাবি করেন তিনি।
ইমরান খানের বোন আলিমা খান রায়কে ‘পূর্বলিখিত স্ক্রিপ্টের’ অংশ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যারা এসব মামলা করছে, তারা খুব একটা বুদ্ধিমান নয়। তাদের লেখা স্ক্রিপ্টই আমি বুঝতে পারি না।
তিনি আরও দাবি করেন, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে দ্রুত রায় ঘোষণা করতে চাওয়া হয়েছিল। তার প্রশ্ন, ১০ বছর দিন আর ১৪ বছর দিন—পার্থক্যটা কোথায়? আগেই তো ১৪ বছর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতি ছয় মাস পরপর নতুন রায় ঘোষণার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের জনগণ আর তা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আলিমা খান আরও অভিযোগ করেন, বুশরা বিবিকে কেন অবৈধ একক কারাবাসে রাখা হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুবও রায়ের নিন্দা জানিয়েছেন। এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ রায়। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে আইনের শাসন বলে কিছু নেই।
-এমএমএস