images

আন্তর্জাতিক

ওসমান হাদির জানাজায় জনস্রোতের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ ওসমান হাদির জানাজা। জনসমুদ্রের মতো ভিড়, শোকস্তব্ধ পরিবেশ আর এক হৃদয়স্পর্শী নীরবতা মিলিয়ে এই জানাজা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের এই বিপ্লবীর জানাজায় জনস্রোতের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ লাখো মানুষ প্রয়াত যুবনেতা ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে হাদিকে দাফন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার বীরত্বসূচক ভূমিকাকে সম্মান জানানোর কথাও উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

image

‘বাংলাদেশের নিহত ছাত্রনেতার শোক পালনে ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে তুর্কি বার্তা সংস্থা টিআটি ওয়ার্ল্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৩২ বছর বয়সী শরীফ ওসমান হাদি ভারতের একজন স্পষ্ট সমালোচক ছিলেন এবং ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।’ হাদির জানাজা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতির কথাও উঠে এসেছে তাদের প্রতিবেদনে।

আরেক তুরস্কের আরেক সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব শরীফ ওসমান হাদির জানাজায় অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা জানাজাপয় যোগ দিয়েছিলেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হাদির জানাজায় বিপুল জনসমাগমের একটি ছবি দিয়ে লিখেছে, ২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের অন্যতম নেতা ওসমান হাদির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার স্মরণে আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

image

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের শিরোনাম, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নিহত যুব নেতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত’। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব শরীফ ওসমান হাদি, যিনি গত সপ্তাহে ঢাকায় মুখোশধারী আততায়ীদের দ্বারা মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ছয় দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে তিনি মারা যান। তার মৃত্যু দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে অস্থিরতার ঢেউ তুলেছে। শনিবারের শেষকৃত্যের জন্য রাজধানী জুড়ে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, তবে নতুন করে কোনও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

‘তার রক্ত বৃথা যাবে না’- বললেন হাদির জানাজায় অংশ নেয়া লাখো মানুষ— শিরোনামে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ভোর থেকেই দলে দলে মানুষ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিকে ছুটে আসে, এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সংসদ ভবনের বাইরের এলাকা ভরে যায়। তাদের অনেকে হাতে ছিল জাতীয় পতাকায়, আবার কেউ কেউ হাদির হত্যার জবাবদিহিতার দাবিতে স্লোগান দেন। 

কলকাতা-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, হাদির জানাজা ঘিরে ঢাকায় বিপুল জমায়েত হয়েছে। এছাড়া জানাজার পর বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, হাদির জানাজায় উপস্থিত জনতার একাংশ জোর করে সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে সেখানে অবস্থানরত সেনা সদস্যেরা তাদের বাধা দেন।

image

এছাড়াও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসটাইমস অব ইন্ডিয়াসহ প্রায় সব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে

প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসীর গুলিতে মারাত্মক আহত হন ওসমান হাদি। রিকশায় থাকা অবস্থায় তার মাথায় গুলি লাগে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে মারা যান তিনি।

গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয় ওসমান হাদির মরদেহ। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয় লাশ।

আজ সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। জানাজার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হয় বিপ্লবী এই তরুণকে।