images

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশসহ ৭ দেশ নিয়ে আরও কঠোর অবস্থানে ইইউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম

বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের যে সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেসব দেশ থেকে আশ্রয় আবেদন উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব দেশের প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়েও সম্মত হয়েছেন জোটের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইইউ। এর কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

ইইউর ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, মিশর, কসোভো, ভারত, মরক্কো এবং টিউনিশিয়া—এই সাত দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। 

এছাড়া ইইউর নীতি অনুযায়ী, জোটের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র এবং যেসব দেশ ইইউ সদস্যপদ নিতে চায়, সেসব দেশকেও নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তালিকায় আলবেনিয়া, মন্টেনেগ্রো এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোর নামও থাকতে পারে। তবে ইইউ কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বা কোনো দেশে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়, সেক্ষেত্রে সেটিকে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা হবে। 

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের (যেখানে ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা রয়েছেন) মধ্যে হওয়া চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো দেশকে তখনই ‘নিরাপদ’ বলা হবে, যখন ওই দেশটিতে ‘‘সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নির্বিচারে সহিংসতার মতো প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি না থাকে।’’

তবে ‘নিরাপদ’ ঘোষিত দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে ইউরোপীয় কমিশন। ওই সব দেশে পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিলে ‘নিরাপদ দেশ’ স্বীকৃতি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদ দেশের তালিকা আরো দীর্ঘ করারও সুযোগ রাখা হয়েছে।

এই ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকাটি ইইউর সব রাষ্ট্রেই কার্যকর থাকবে। কিন্তু এসব দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ঢালাওভাবে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না বলে জানিয়েছে ইইউ। প্রতিটি আশ্রয় আবেদনই খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ইইউ দেশগুলো ‘নিরাপদ’ দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার অধিকার পাবে। এর অর্থ হলো, বিশেষ কারণ ছাড়া ‘নিরাপদ’ দেশগুলো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয়ের সুযোগ অনেকটাই কমে আসবে।

২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে ১০ লাখের বেশি শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপর থেকেই আশ্রয় ইস্যুতে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। তাই জোটের আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কারের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ বাগ-বিতণ্ডার পর ২০২৪ সালে একটি ‘অভিন্ন আশ্রয়নীতি’ প্রণয়ন করে ইইউ দেশগুলো। 

এই অভিন্ন আশ্রয়নীতি আগামী বছরের জুনে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে প্রায় নিত্যনতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই নীতিতে, ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিধান রাখা হয়েছে। তবে, এমন দেশে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বা নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইইউ বিষয়ক পরামর্শক অলিভিয়া সান্ডবার্গ দিয়েজ বলেছেন, ইইউর নতুন পদক্ষেপগুলো ‘‘আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাওয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা’’ এবং এটি অভিবাসীদের বিপদের মুখে ফেলবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি আইনপ্রণেতা মেলিসা কামারা বলেছেন, নিরাপদ উৎস দেশের ধারণা এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নেয়া অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের ‘‘ইইউ সীমান্তের বাইরে ফেরত পাঠানোর দরজা খুলে দিচ্ছে, যেখানে তৃতীয় দেশের নাগরিকেরা প্রায়ই কোনো নজরদারি ছাড়াই অমানবিক আচরণের শিকার হন।’’ 

তিনি আরও বলেছেন, এসব পদক্ষেপ ‘‘নিঃসন্দেহে হাজারো মানুষকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলবে।’’

ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলের ইইউ পরিচালক সেলিন মিয়াস বলেছেন, ‘‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ, আশ্রয়প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির এই উদ্যোগ যেসব মানুষের সত্যিকারার্থে সুরক্ষার প্রয়োজন, তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে।’’

বিশেষ করে অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী—যাদের মানবাধিকার স্পষ্টত হুমকির মুখে থাকে, তাদের বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

ইটালি থেকে নির্বাচিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ আলেসান্দ্রো সিরিয়ানি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ইইউ তার সীমান্ত কঠোর করার দৃঢ় বার্তা দিয়েছে।

তিনি বলেন, নিরাপদ এবং অনিরাপদ দেশগুলো স্পষ্ট হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সদস্য দেশগুলোর কাজ সহজ হয়েছে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সদস্য দেশগুলো নিজস্ব অভিবাসন নীতি অনুযায়ী অন্য কোনো দেশকেও ‘নিরাপদ’ ঘোষণার অধিকার পাবে। যেমন, জার্মানি নিজ উদ্যোগে একটি নিরাপদ দেশের তালিকা তৈরি করেছে।

বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুমতির প্রয়োজন হবে।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস


এমএইচআর