আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভারতের কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুর।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি সদ্য একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে আমরা সরকারকে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছি।’
একইসঙ্গে, ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এবং যাদের ভারতপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের বৈরিতা উসকে দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের ভিসা স্বাভাবিক করার সুপারিশ করেছিলেন বলে জানিয়ে এই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘কিন্তু গতকাল রাতের সহিংসতার কারণে দুটো ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে, যেটা খুবই হতাশাজনক। কারণ বাংলাদেশিরা ভারতে আসতে চাচ্ছেন, তারা অভিযোগ করছেন যে তারা আগের মতো ভিসা পাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সাহায্য করা আমাদের সরকারের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ঢাকায় থাকা ভারতীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে এবং পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য যা করার দরকার তা করার জন্য অনুরোধ করবে।’
শশী থারুর আরও বলেন, আমরা আশা করি দ্রতই সব স্বাভাবিক হবে। একইসাথে আমি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাবো, তাদের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ককে আরও মূল্যায়ন করতে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর একটি বিখ্যাত উক্তি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভূগোল বদলাতে পারবো না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকবো। তারা যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। তাই তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে কাজ করতে শিখে নেওয়া।
প্রসঙ্গত, আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়া জুলাই আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা বিপ্লবী নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদি বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হতে শুরু করে। রাতেই শাহবাগ অবরোধ করে তার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ভারত থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবারও নানা জায়গায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার কালভার্ট রোডে রিকশাযোগে আসার সময় একটি মোটরসাইকেলে এসে দুজন যুবক গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে সঙ্গীরা উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয়েছিল এভারকেয়ার হাসপাতালে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। কিন্তু তাকে আর ফেরানো যায়নি। বৃহস্পতিবার দেশবাসীকে কাঁদিয়ে হাদি না ফেরার দেশে চলে যান।
এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু শুটার ফয়সাল ও তার সহযোগীকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, তারা দেশেই আছেন। ইতোমধ্যে ফয়সালের বাবা মাকে গ্রেফতার ও গুলি করা পিস্তল উদ্ধার করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এমএইচআর