আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১১ এএম
শীতকালীন ঝড়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরও চরম আকার ধারণ করেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন বাস্তুচ্যুত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে জরুরি আশ্রয় ও ত্রাণসামগ্রী গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাবু, কম্বলসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা সামগ্রী সীমান্তে প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেগুলোর প্রবেশে বাধা দিচ্ছে বা কড়াকড়ি আরোপ করছে।
ঝড়ের মধ্যে গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে। বুধবার উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই শিশুসহ ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করেন।
এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু তীব্র শীতে মারা গেছে। এতে অপর্যাপ্ত আশ্রয়ে থাকা শিশু ও বৃদ্ধদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘ঝড়ের কারণে গাজাজুড়ে বহু আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত সম্পদও ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৩০ হাজার শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত না করা গেলে কার্যক্রম স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।’
গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় বর্তমান পরিস্থিতি একটি প্রকৃত মানবিক বিপর্যয়।’
যুদ্ধবিরতি আলোচনা ও সহায়তা প্রবেশ
এমন পরিস্থিতিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জাসিম আল থানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাতারি কর্মকর্তারা জানান, আলোচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল রাখা, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রগতির বিষয় উঠে আসে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ মোহাম্মদ গাজায় মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্ন ও শর্তহীনভাবে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলেন এবং জানান, এ বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত অগ্রসর হওয়া জরুরি।’
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও হামলা
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গাজায় সহিংসতা থামেনি। চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজার তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর কাছে ছোড়া একটি মর্টার শেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে—এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এ ছাড়া খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। গাজা শহরের পূর্বের তুফ্ফাহ এলাকায় গুলিতে দুজন আহত হয়েছেন।
অধিকৃত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার খবরে বলা হয়, কালকিলিয়ায় ইসরায়েলি সেনারা ২০ বছর বয়সী এক যুবককে পায়ে গুলি করে আহত করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৮ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছেন।
এমআর