images

আন্তর্জাতিক

অস্ত্র কেড়ে নেওয়া সেই আহমেদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের উৎসবে ভয়াবহ হামলার সময় এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো আহমেদ আল-আহমেদকে ‘হিরো’ হিসেবে অভিহিত করছে পুরো বিশ্ব। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া ফল এই বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিস।

আহমেদের সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী আলবানিস বলেছেন, ‘তিনি কফি নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান তার সামনে মানুষকে গুলি করা হচ্ছে। এরপর এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সাহসিকতা সব অস্ট্রেলিয়ানের জন্য অনুপ্রেরণা।’

বন্দুকধারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আহমেদ নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার সার্জারি হয়েছে। তবে গুলি দেহের ভেতর থেকে যাওয়ায় তাকে আরও একবার সার্জারি করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আলবানিস।

এরআগে সোমবার এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে অ্যালবানিজ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা মানবতার সবচেয়ে অন্ধকার দিক দেখেছি একটি সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে। কিন্তু একই সঙ্গে দেখেছি মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ—আহমেদ আল আহমেদ নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে বিপদের দিকে ছুটে গেছেন এবং মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।’ 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল-আহমেদ সিরিয়ার ইদলিবের আল-নায়রব এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে সিরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তিনি। বর্তমানে সিডনিতে একটি ফলের দোকান চালান। তার দুই মেয়ে রয়েছে। যার একজনের বয়স তিন, আরেকজনের ছয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখা যায়, ঘটনার সময় সাদা শার্ট ও প্যান্ট পরা আহমেদ পার্ক করা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। পেছন দিক থেকে তিনি বন্দুকধারীর দিকে দৌড়ে যান, তার গলা চেপে ধরেন এবং রাইফেলটি ছিনিয়ে নেন। এরপর বন্দুকধারী মাটিতে পড়ে যান এবং সেই ব্যক্তি তার দিকেই অস্ত্র তাক করে রাখেন। তার এই জীবন বাজি রেখে হামলাকারীকে নিরস্ত্র করায় বহু মানুষের প্রাণ বেঁচে যায়। তবে ধস্তাধস্তির ওই মুহূর্তটিতে দ্বিতীয় এক হামলাকারীর গুলিতে আহমেদ নিজেও আহত হন।

কয়েক মাস আগে অস্ট্রেলিয়া আসা আহমেদের বাবা-মা জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা তার কাঁধে চার থেকে পাঁচটি গুলি করেছে। যারমধ্যে কয়েকটি গুলি এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, ‘আহমেদ যে কেউকে রক্ষায়, যে কোনো কিছু করত। তাদের পরিচয়, ধর্ম কী, সেগুলো সে দেখত না। ওই সময় যা করার দরকার ছিল, তাই করেছে। যারা পথে মারা যাচ্ছিল, তাদের পরিচয় কি সে ব্যাপারে সে কোনো কিছু চিন্তা করছিল না।’

এদিকে আহমেদের এমন বীরত্ব শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, পুরো বিশ্বজুড়ে তার প্রতি সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতার ঢল নেমেছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও তার প্রশংসা করেছেন। যদিও ভুলবসত প্রথমে আহমেদকে একজন ইহুদি বীর আখ্যা দেন তিনি! পরে অবশ্য আরেক বিবৃতিতে আহমেদ আল-আহমেদকে মুসলিম বীর বলেই পরিচয় করিয়েছেন নেতানিয়াহু।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আহমেদের সাহসিকতার প্রশংসা করে তাকে ‘অত্যন্ত সাহসী মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন।

অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস মিনস আহমেদকে ‘প্রকৃত নায়ক’ অভিহিত করে বলেন, তার সাহসিকতার কারণেই আজ রাতে অসংখ্য মানুষ বেঁচে আছেন। এমনকি চিকিৎসাধীন আহমেদকে দেখতে হাসপাতালেও যান তিনি। 

অন্যদিকে আহমেদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো ও তাকে সহযোগিতার জন্য ‘গোফান্ডমি’-তে খোলা একটি স্বপ্রণোদিত তহবিলে একদিনেই ১১ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে গেছে। 

এই তহবিলে মার্কিন ধনকুবের বিল অ্যাকম্যান একাই ৯৯ হাজার ৯৯৯ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকাহ উদযাপনের সময় দুই বন্দুকধারীর গুলিতে ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশুসহ মোট ১৫ জন মারা গেছে। ঘটনায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন বন্দুকধারী পরিচয় প্রকাশ করেছে স্থানীয় পুলিশ। 

তারা হলেন—সাজিদ আকরাম (৫০) ও তার ছেলে নাভিদ আকরাম (২৪)। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই সাজিদ নিহত হয়েছেন। তিনি প্রায় ২৭ বছর আগে ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি স্থায়ী ভিসায় ছিলেন। আরও তার ছেলে নাভিদ জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

পুলিশ বলছে, তারা এটিকে গত তিন দশকে অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছে।


এমএইচআর