আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ এএম
অধিকৃত পশ্চিম তীরের নূর শামস শরণার্থী শিবিরে চলতি সপ্তাহে ২৫টি আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। খবর আল জাজিরার।
তুলকারেম গভর্নরেটের গভর্নর আবদাল্লাহ কামিল সোমবার এএফপিকে বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কোগাট তাকে এই ধ্বংসযজ্ঞের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। নূর শামস শরণার্থী শিবিরটি তুলকারেম গভর্নরেটের অন্তর্ভুক্ত।
নূর শামসের পাশের তুলকারেম শরণার্থী শিবিরের জনপ্রিয় কমিটির প্রধান ফয়সাল সালামা জানান, এই ধ্বংসাদেশের ফলে প্রায় ১০০টি পরিবারের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ‘অপারেশন আয়রন ওয়াল’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, পশ্চিম তীরের উত্তরের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্য, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যেসব সামরিক কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, পশ্চিম তীরেও ইসরায়েল একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করে এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমি দখল জোরদার করছে।
পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক নূর ওদেহ জানান, গত প্রায় এক বছর ধরে চলা এই অভিযানে তিনটি শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি বাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের চলাচল ও বসবাস সীমিত করে পশ্চিম তীরের ভৌগোলিক বাস্তবতা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে।
সোমবার নূর শামস শিবির থেকে বাস্তুচ্যুত একদল বাসিন্দা ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান দিয়ে বন্ধ করে রাখা সড়কের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা ধ্বংসাদেশ প্রত্যাহার এবং নিজেদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করেন।
ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিলের প্রধান রুহি ফাত্তুহ বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘জাতিগত নির্মূল ও ধারাবাহিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির অংশ’। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ কথা জানিয়েছে।
এদিকে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলোকাস্ট ও গণহত্যা অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ওমের বার্তভ বলেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরায়েলের আচরণ ‘অমানবিকতার’ দিকে এগোচ্ছে।
তার মতে, এতে এমন এক ‘সামাজিক মৃত্যু’র পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যেখানে এক জনগোষ্ঠী আরেক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে কার্যত অস্বীকার করে বসবাস করছে।
নূর শামসের বাসিন্দা আয়েশা দামা এএফপিকে বলেন, তার চার তলা বাড়ি যেখানে প্রায় ৩০ জন পরিবারের সদস্য বসবাস করেন ধ্বংসের তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, “ঘটনার দিন কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।”
আরেক বাসিন্দা সিহাম হামায়েদ বলেন, তার ভাইদের সব বাড়িই ভেঙে ফেলার তালিকায় রয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
নূর শামসসহ পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরগুলো গড়ে ওঠে ১৯৪৮ সালের নাকবার পর। সে সময় বর্তমান ইসরায়েল ভূখণ্ড থেকে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। সময়ের সঙ্গে এসব শিবির ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শরণার্থী পরিচয় বহন করছেন বাসিন্দারা।
এমআর