images

আন্তর্জাতিক

এবার ভারী বৃষ্টিপাত-বন্যা-তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত গাজা, নিহত ১৪ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম

শীতকালীন ঝড় ‘বায়রন’ এর প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাত এবং তীব্র ঠান্ডায় গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘন্টায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কতৃপক্ষ। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় শত শত তাঁবু তলিয়ে গেছে, এতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে গাজার একাধিক আশ্রয় শিবিরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুগুলো প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের দুই বছরের গণহত্যার কারণে ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত প্রায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে বৃষ্টির পানি আটকে পড়া আশ্রয়শিবিরে রাহাফ আবু জাজার নামের আট মাসের এক শিশু মারা গেছে। পরিবার বলছে, বৃষ্টির পানি ও বাতাসে ঠান্ডায় মারা গেছে শিশুটি।

image

শুক্রবার হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় কমপক্ষে দুই শিশু মারা গেছে। এরমধ্যে গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে শিশু তাইম আল-খাজা এবং একটি স্কুলে আশ্রয় পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া ৯ বছর বয়সী হাদিল হামদান তীব্র ঠান্ডায় মারা গেছে। 

এদিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কতৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝড় বায়রন আশ্রয়কেন্দ্র এবং ঘরবাড়িকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে, যার মধ্যে অনেকগুলো ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ইতোমধ্যেই বেশ তয়েকটি স্থানে বাড়িঘর ধসে পড়ে প্রাণহানি হয়েছে। এরমধ্যে গাজা শহরের বেইত লাহিয়ায় একটি ভবন ধসে কমপক্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং রেমাল এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে একটি বড় দেয়াল ধসে পড়ে কমপক্ষে আরও দুজন মারা গেছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শত শত আশ্রয় শিবির প্লাবিত হয়েছে, যেখানে মাঝারি বৃষ্টিপাতও ‘দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে’ এবং আগামী কয়েক ঘন্টা ধরে এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

image

সংস্থাটি বলছে, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় ১০ লাখেরও বেশি আশ্রয় সামগ্রী পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জলরোধী তাঁবু, তাপীয় কম্বল, ঘুমানোর মাদুর এবং টারপলিন। কিন্তু এই সরবরাহগুলো ‘বন্যা সহ্য করতে পারবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইওএম।

আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার মানুষ অনেক দিন ধরেই ক্ষতি এবং ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে, গতকাল এই ঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানার পর পরিবারগুলো তাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে তাদের সন্তানদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এই অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে জরুরি সরঞ্জাম ও খাদ্য সরবরাহ পৌঁছানো অপরিহার্য।’ 

image

প্যালেস্টাইন হাউজিং কাউন্সিলের জরুরি ও ত্রাণ দলের প্রধান হাইথাম আকেল বলেছেন, ‘গতকাল আমরা ব্যাপক বন্যা প্রত্যক্ষ করেছি, বহু অবকাঠামো ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরির জন্য বালির বস্তা ব্যবহার করেছি, কিন্তু জীর্ণ তাঁবু দিয়ে পানি প্রবেশ করায় অনেক মানুষের বিছানা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

ফিলিস্তিনি মেডিকেল রিলিফ সোসাইটি জানিয়েছে, বৃষ্টিতে তাদের কমপক্ষে চারটি মেডিকেল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে, যার ফলে সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র: আলজাজিরা, নিউ আরব


এমএইচআর