আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
দুই দিনের সফরে আজ (বৃহস্পতিবার) ভারতে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই সফর ঘিরে বিশ্বব্যাপী আবারো আলোচনায় এসেছে তার ব্যবহৃত ‘অরাস সেনাট’ নামের অত্যাধুনিক সাঁজোয়া বিলাসবহুল লিমুজিন। পুতিনের ভারত সফরের জন্য ‘ফোর্ট্রেস-অন-হুইলস’ বা ‘চাকার ওপর দুর্গ’ নামে পরিচিত গাড়িটি মস্কো থেকে আনা হয়েছে।
রাশিয়ার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিলাসবহুল লিমুজিন অরাস সেনাট বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ রাষ্ট্রীয় গাড়িগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত, যা রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবহারের জন্যই বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। ‘রাশিয়ান রোলস-রয়েস’ নামে পরিচিত এই গাড়িতে শক্তিশালী সাঁজোয়া বডি, ব্ল্যাকআউট জানালা এবং অত্যাধুনিক, বিলাসবহুল ও উচ্চ প্রযুক্তির ইন্টেরিয়রে সজ্জিত।

এর আগে পুতিন ব্যবহার করতেন মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস ৬০০ গার্ড পুলম্যান, তবে পরে আমদানি নির্ভরতা কমাতে মস্কোর নিজস্ব ‘কর্তেজ প্রকল্প’-এর অধীনে তৈরি হয় অরাস সেনাট, যা অতি-বিলাসী ও সম্পূর্ণ সাঁজোয়া সরকারী যানবাহন তৈরির একটি কর্মসূচি।

২০১৮ সালে পুতিনের শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমবার এটি দেখা যায়। রাশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামি, সামরিক যান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোলার্স জেএসসি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের তাওয়াজুন হোল্ডিংয়ের যৌথ উদ্যোগে গাড়িটি তৈরি করে রুশ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান- অরাস মোটরস।
২০২১ সালে ইয়েলাবুগায় এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় এবং এরপর থেকে বেশ কিছু হাই-প্রোফাইল কূটনৈতিক মুহূর্তে স্থান পেয়েছে। ২০২৪ সালে এই গাড়ির একটি সংস্করণ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকেও উপহার দেন পুতিন। তবে অরাস সেনাট সাধারণ নাগরিকদের জন্য সীমিত সংস্করণও আছে, বছরে সর্বোচ্চ ১২০টি গাড়ি উৎপাদন করা হয়।
অরাস সেনাট গাড়িটি মূলত চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও এর যাত্রীদের জীবন রক্ষার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা বৈশিষষ্ট্যের মধৌ রয়েছে—
সম্পূর্ণ বুলেটপ্রুফ বডি: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আর্মার-পিয়ার্সিং বুলেট প্রতিরোধে সক্ষম।
ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিরোধী: এর প্রতিরক্ষামূলক স্তরটি যেকোনো বিস্ফোরণ ও আকাশপথের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
সাবমেরিনের মতো ক্ষমতা: জরুরি মুহুর্তে পানিতে পড়ে গেলেও গাড়িটি যেন ভেসে থাকতে পারে এবং নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো পর্যন্ত চালানো যায় এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
রান-ফ্ল্যাট প্রযুক্তি: সব টায়ার নষ্ট হলেও উচ্চগতিতে চলতে পারে।

রাসায়নিক হামলা প্রতিরোধ: কেবিনে রয়েছে আলাদা এয়ার-ফিল্টারেশন সিস্টেম, যা বিষাক্ত গ্যাস ঢুকতে দেয় না।
উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিন: এই গাড়িতে রয়েছে ৪.৪ লিটার টুইন-টার্বো ভি৮ হাইব্রিড ইঞ্জিন, যা মাত্র ৬–৯ সেকেন্ডের মধ্যেই ০-১০০ কিলোমিটার ঘণ্টার গতিতে পৌঁছাতে পারে এবং এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।
বিলাসবহুল অভ্যন্তরাল সাজসজ্জা: উন্নত মানের চামড়া, কাঠের প্যানেল, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও গোপন যোগাযোগ সুবিধাও রয়েছে এই গাড়িতে।
অরাস সেনার সাধারণ মডেলের দাম প্রায় ১৮ মিলিয়ন রুবল (প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা)। পুতিনের জন্য তৈরি বিশেষ সাঁজোয়া সংস্করণে যুক্ত থাকে অতিরিক্ত শ্রেণিবদ্ধ নিরাপত্তা প্রযুক্তি, যার মূল্য প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণ জনগণের জন্য এই সংস্করণ পাওয়া যায় না।
সূত্র: এনডিটিভি
এমএইআর