images

আন্তর্জাতিক

ইতিহাসের বিধ্বংসী ১০ ভূমিকম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম

স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপেছে ঢাকা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। 

মূলত ১৯০০ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ভূমিকম্পের রেকর্ড রাখা শুরু করে ইউএসজিএস। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গত ১২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১০টি ভূমিকম্পের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। 

তালিকায় দেখা যায়- বিশ্বের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৬০ সালে চিলির বিওবিও প্রদেশে। এটিকে ‘ভালদিভিয়া ভূমিকম্প’ বা ‘১৯৬০ সালের চিলি ভূমিকম্প’ হিসাবেও পরিাচত, যা প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ৬৫৫ জন মানুষ। এতে হাজার হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাস্তুচ্যুত হন কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ।

chili
১৯৬০ সালের চিলি ভূমিকম্প

১৯৬৪ সালে ইতিহাসের দ্বিতীয় বিধ্বংসী ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। ৯ দশমিক ২ মাত্রার সেই ভূমিকম্প এবং তার জেরে সৃষ্ট সুনামিতে নিহত হয়েছিলেন ১৩০ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ২৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর আঘাত হেনেছিল তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্পটি। ৯ দশমিক ১ মাত্রার ওই ভূমিকম্পটি ১০ মিনিটেরও বেশি স্থায়ী ছিল যা সবচেয়ে দীর্ঘতম সময়ের ভূমিকম্প। ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি বিশ্বের ১৪টি দেশে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটায়। এটি বক্সিং ডে সুনামি নামেও পরিচিত। কোথাও কোথাও ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ে, বাড়িঘর ধ্বংস করে মানুষজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। 

indonnnsia
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর আঘাত হেনেছিল তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্পটি

চতুর্থ শক্তিশালি ভূমিকম্পটি হয়েছিল জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে। ২০১১ সালে ১১ মার্চ ৯ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পের পর বিশাল সুনামির সৃষ্টি করে, ওই ঘটনায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। বাস্তুচ্যুত হন ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

১৯৫২ সালের ৫ নভেম্বর রাশিয়ার কামচাটকা ক্রাই উপদ্বীপে আঘাত হেনেছিল ইতিহাসের পঞ্চম শক্তিশালী ভূমিকম্পটি। ৯ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে হাওয়াই এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য অংশে মারাত্মক ক্ষতি করে। এরপর সুনামি আসে যা কামচাটকা এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে ২৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ বয়ে আনে। এই ভূমিকম্পে প্রাণহানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি তবে তখনকার সময়ে ১০ লাখ ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল রাশিয়ায়।

ষষ্ঠস্থানে যৌথভাবে রয়েছে ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী চিলির কিউরিহিউ শহরে এবং চলতি বছরের ৩০ জুলাই রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হানা ভূমিকম্প। দুটি ভূমিকম্পের রিখটর স্কেলে মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮। ২০১০ সালে চিলির ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন ৫২৩ জন। এদিকে আজকের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি। 

১৯০৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের এসরোলডাস শহরে আঘাত হেনেছিল ইতিহাসের সপ্তম বিধ্বংসী ভূমিকম্পটি। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। 

অষ্টম শক্তিশালী ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের র‌্যাট দ্বীপে। ১৯৬৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আঘাত হানা ৮ দশমিক ৭ সেই ভূমিকম্পে জনবসতিহীন দ্বীপটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামিতে আলাস্কা এবং হাওয়াইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

১৯৫০ সালের ১৫ই আগস্ট ৮ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলে, যা তালিকায় ৯ম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। এটি আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। সেই ভূমিকম্পের জেরে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

বিশ্বের ইতিহাসে তালিকায় ১০ম শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের কাছে ভারত মহাসাগরে। ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি ‘ভারত মহাসাগরীয় ভূমিকম্প’ নামে পরিচিত। 

সূত্র: ইউএসজিএস, উইকিপিডিয়া

 

এমএইচআর