images

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার রায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফাঁসির আদেশ নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনার ফাঁসির এই রায় প্রধান খবর হিসেবে প্রচার করেছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করে। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ে আদালত বলেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

‘ছাত্র-আন্দোলনে দমন-পীড়নের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দোষী সাব্যস্ত’— শিরোনামে প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে কলা হয়, বাংলাদেশের একটি আদালত সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে মারাত্মক দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার জন্য তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে কয়েক মাসব্যাপী ধরে চলা বিচারের সমাপ্তি ঘটেছে।
 
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই রায় দেওয়া হল। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিন প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এরমধ্যে   দুটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

‘হাসিনাকে ফাঁসির সাজাই দিল বাংলাদেশের ট্রাইবুনাল, রায় ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল ঢাকার আদালতকক্ষ’— শিরোনাম দিয়ে কলকাতা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার। 

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়নের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযেগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ৭৮ বছর বয়সী পলাতক রাজনীতিবিদ গত বছরের গণ-বিক্ষোভ দমনের পিছনে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের খবর করেছে ‘বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড।’

বার্তাসংস্থা আনাদোলু তাদের শিরোনামে লিখেছে, “বাংলাদেশের পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড।

ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ‘শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পেলেন মৃত্যুদণ্ড। সাবেক পুলিশ প্রধান রেহাই পেলেন মৃত্যুদণ্ড থেকে।’

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন লিখেছে, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।’ এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমগুলোও ফলাও করে ভারতে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের খবর প্রচার করেছে। 

এরআগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিটি প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এগুলোর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছে পাঁচটি অভিযোগ তিনটি কাউন্টে ভাগ করে সাজা প্রদান করা হয়েছে আসামিদের। তাদের বিরুদ্ধে গঠন করা প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ই জুলাই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উল্লেখ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের 'প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়' আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র 'আওয়ামী সন্ত্রাসী' ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ করে। প্ররোচনা, উস্কানি, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এতে।


এমএইচআর