আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ এএম
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দিনভর হামলায় অন্তত ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—এ সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
কেন্দ্রীয় গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর হামলায় ১২ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে। আল-আহলি স্টেডিয়ামটি কয়েক সপ্তাহ ধরে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
বাস্তুচ্যুত নারী নাজওয়া বলেন, ‘হাতে যা ছিল, শুধু সেটাই নিয়ে বের হতে পেরেছি। আমরা ভীত। যাতায়াত ব্যয়বহুল। কিছুই আনতে পারিনি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজা সিটির মানুষদের ওপর ভয় সৃষ্টি করছে এবং লাখো মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে।
তবে ইসরায়েলের সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেন, মানুষকে দক্ষিণে পাঠানো হচ্ছে তাদের নিরাপত্তার জন্য। তিনি জানান, ‘গাজার অধিকাংশ মানুষ ইতিমধ্যে গাজা সিটি ছেড়ে গেছে। সেনারা শহরে সুসমন্বিত ও পদ্ধতিগতভাবে অগ্রসর হবে।’
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন অবশ্য বলেছে, এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলের ভেতরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৬৭ হাজার ১৬০ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষের লাশ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘে তীব্র নিন্দা
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যদি মানুষের যন্ত্রণা অনুভব না করতে পারেন, তবে মানুষ বলার যোগ্যতা নেই। যারা শিশু হত্যা করে, তারা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানান। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে বলেন, নীরব আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষের উদ্যোগ চলছে। জুলাইয়ে ১৪২টি রাষ্ট্রের সমর্থনে গৃহীত ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’র ওপর ভিত্তি করে এসব আলোচনা এগোচ্ছে।
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ওয়াশিংটন আশাবাদী যে কয়েক দিনের মধ্যে কোনো সমাধান ঘোষণা করা যাবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অতীতে শান্তি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি দোহায় শান্তি আলোচনা করতে যাওয়া হামাস নেতাদের হত্যার নির্দেশ দেন। মার্চে তিনি একতরফাভাবে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি থেকে সরে গিয়ে গাজায় বিমান হামলা ও সম্পূর্ণ সাহায্য অবরোধ চালু করেন। এতে দুর্ভিক্ষে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইসরায়েলের ভেতরেও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বুধবার তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে শত শত মানুষ তার জাতিসংঘ সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন।
জাতিসংঘে যাওয়ার আগে নেতানিয়াহু আবারও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তার কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘কিছু নেতা যে লজ্জাজনকভাবে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, তা কোনোভাবেই ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।’
এমআর