আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার দেশটির বিমান বাহিনীর বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান খাইবার পাখতুনখোয়ার তিরাহ উপত্যকার মাতরে দারা গ্রামে সন্ত্রাসীদের আবস্থান লক্ষ্য করে আটটি এলএস-৬ বোমা ফেলে, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
অভিযানের পরবর্তী মাত্রে দারা গ্রামের কিছু ছবি ও ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেসব ছবি ও ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করছে উদ্ধারকারী বাহিনী। ফলে নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের আঞ্চলিক উপপরিচালক ইসাবেলে ল্যাসি বলেছেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ খাইবার পাখতুনখোয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা এবং দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ উৎখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’
এদিকে এই ঘটনায় দেশটির সরকার বা সামরিক বাহিনী এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেনি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন প্রাদেশিক ডেপুটি কমিশনার বিলাল শহীদ এবং জেলা পুলিশ অফিসার মাজহার ইকবালের সঙ্গে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয় একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছেন, ‘যুদ্ধ বিমানগুলো চারটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, যেগুলি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল’। তবে কারা এই হামলা চালিয়েছে তা উল্লেখ করেননি তিনি।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার তিরাহ এলাকায় বিমান হামলার ফলে শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
HRCP is deeply shocked to learn that a number of civilians, including children, have been killed, allegedly as a result of aerial bombing in Tirah, Khyber district, Khyber Pakhtunkhwa. We demand that the authorities carry out an immediate and impartial inquiry into the incident…
— Human Rights Commission of Pakistan (@HRCP87) September 22, 2025
সংস্থাটি এক এক্স বাতায় এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে আরও বলেছে, ‘কর্তৃপক্ষ যেন এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনে। রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে সকল বেসামরিক নাগরিকের জীবনের অধিকার রক্ষা করতে বাধ্য, যা তারা বারবার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
এছাড়াও খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক বিধানসভার স্পিকার বাবর স্বাতী ফেডারেল এবং প্রাদেশিক সরকারকে এ ঘটনার স্বচ্ছ এবং তাৎক্ষণিক তদন্ত, দায়ীদের চিহ্নিত করার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আফগান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পাকিস্তানি ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তানের সরকার। ২০২২ সালের শেষের দিকে টিটিপি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করার পর থেকে হামলা আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনী সদস্যরা তাদের ধারাবাহিক হামলার শিকার হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রদেশটিতে ৬০৫টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কমপক্ষে ১৩৮ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৭৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই ১২৯টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, ডন
এমএইচআর