images

আন্তর্জাতিক

সৌদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আরও দেশকে টানতে চায় পাকিস্তান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

সৌদি আরবের সঙ্গে ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক’ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। এবার সেই চুক্তিতেই আরও কয়েকটি দেশকে টানতে চায় পরমাণু শক্তিধর দেশটি। সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। 

বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ নামে পরিচিত এই সমঝোতাকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু সামরিক সহযোগিতার নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত বার্তা বহন করে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঘটলে, তা উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিক্রিয়ায় যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টি চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। 

এদিকে প্রতিরক্ষা চুক্তির পর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘আজ শাহজেব খানজাদাকে সাথ’ অনুষ্ঠানে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আরও দেশ সৌদি-পাকিস্তানের এই চুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে কি না, বিশেষত আরব দেশগুলো।  

জবাবে খাজা আসিফ বলেন, ‘এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, সবার জন্য দরজা খোলা রয়েছে।’ 

asif
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। 

গত ৪০-৫০ বছরের এই অঞ্চলের ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে আসিফ জানান, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মতো একই ধরণের ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন তিনি। কারণ পাকিস্তানের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের ভূমি এবং জাতিকে রক্ষা করা যেকোনও রাষ্ট্র, বিশেষত মুসলিম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার বলে আমি মনে করি।’

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্দিষ্ট করে কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সৌদির সঙ্গে চুক্তিতে এমন কোনও শর্ত নেই যে, অন্য কোনও দেশ এতে যোগ দিতে পারবে না কিংবা পাকিস্তান অন্য কোনও দেশের সঙ্গে আলাদা করে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারবে না। ফলে চাইলেই অন্য যেকোনও দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করায় সম্ভাব্য সংকটের পরিস্থিতিতে কি সৌদি আরবও কি তাদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, ‘আমাদের কাছে যা আছে, আমাদের যতটা ক্ষমতা, এই চুক্তির অধীনে সবটাই ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে পাকিস্তান দায়িত্বশীল। এটাও বলে রাখা প্রয়োজন।’’

এদিকে সম্প্রতি কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার করার কয়েক দিন পরেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছড়াও ইরান, লেবানন, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের পর কাতার ইসরায়েলি তৎপরতা আরব দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ফলে এই চুক্তিটি ইসরায়েলের প্রতি একটি ইঙ্গিত বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। কারও কারও দাবি, পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানকে পাশে নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়  সৌদি আরব। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ‘কোনও নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে এই চুক্তি করা হয়নি। সংকটের পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে থাকাই লক্ষ্য। যৌথ ভাবে যেকোনও আগ্রাসনের মোকাবিলা করা হবে।’

এই চুক্তির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আসিফ বলেন, ‘এই বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার কোনো ভিত্তি বা যুক্তি নেই। কারণ এই চুক্তিটি কোনও আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা নয় বরং একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হবে... আমাদের কোনও অঞ্চল দখল করার বা কাউকে আক্রমণ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে আমাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন যে পাকিস্তানও বেশ কিছুদিন ধরে সৌদি বাহিনীকে প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং সাম্প্রতিক উন্নয়ন কেবল এই সমস্ত কিছুর একটি আনুষ্ঠানিক ‘সম্প্রসারণ’ এবং সেই বোঝাপড়াকে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির রূপ দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সামরিক সহযোগিতার ইতিহাস এবং সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত।’

এছাড়াও সৌদি আরবের পবিত্র ইসলামি স্থানগুলোর সুরক্ষা পাকিস্তানের জন্য একটি ‘পবিত্র কর্তব্য’ বলেও উল্লেখ করেছেন খাজা আসিফ।

সূত্র: জিও নিউজ, ডন

এমএইচআর