আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০০ পিএম
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের আমদানি বন্ধ থাকার কারণে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাজারে ইলিশ সংকট দেখা দেয় এবং দামও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যায়। তবে কলকাতার বাজারে বর্তমানে ভরপুর ইলিশ উঠেছে এবং দামও কমে গেছে, যা সম্ভব হয়েছে বিকল্প উৎস থেকে আমদানির কারণে। কলকাতার বাজারের বড় অংশের ইলিশ আসছে এখন আসছে দেশটির পশ্চিমী রাজ্য গুজরাট থেকে, যেখানে চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে।
কলকাতার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের শারদীয় দূর্গাপূজা উৎসবে ইলিশের ঘাটতি পূরণে গুজরাটের ইলিশের ওপর ভরসা করছেন তারা।
হাওড়া পাইকারি বাজার থেকে গড়িয়াহাট ও লেক মার্কেটের মতো খুচরো বাজারে ভালো মানের ইলিশ ভরে গিয়েছে। ৫০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি ওজনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দামও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল৷ ৫০০ থেকে ৭৫০ গ্রামের মাছ কেজি প্রতি ৬০০-৮০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে৷ আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ৯০০ থেকে ১৪০০ রুপি এবং এক কেজির বেশি হলে দাম ১৬০০-১৮০০ রুপিতে।
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী জানান, ছোট ইলিশ (খোকা ইলিশ) ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মানানোই এবারের ফল। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা দুই মাসের জন্য ছোট ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। এর সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। জেলেদের সচেতন করার জন্য আমরা নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছি যাতে তাঁরা ছোট মাছ না-ধরে। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও এর সুফল মিলবে৷’
মন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশে যেমন তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকে, তেমন সময়সীমা এ রাজ্যেও চালু করা যায়, তবে ফল আরও আশাব্যঞ্জক হবে।
বিগত বছরগুলোতে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, দিঘা, শঙ্করপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইলিশ ভর্তি লরি এবং ট্রাক আসত হাওড়া স্টেশন লাগোয়া পাইকারি মাছ বাজারে। তবে এ বছর বেশির ভাগ ইলিশ আসছে সরাসরি গুজরাটের ভারুচ বন্দর থেকে।
কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানান, বাজারের বড় অংশের ইলিশ আসছে গুজরাত থেকে, যেখানে এবছর রেকর্ড পরিমাণ ধরা পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ টন ইলিশ রাজ্যে আসছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ৷
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের রফতানিকারকদের কাছে পদ্মার ইলিশ পাঠানোর অনুরোধ করেছে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে উত্তর আসবে বলে আশা করছে।’
এছাড়াও চলতি বছর হুগলি, সুন্দরবন, দিঘা ও ডায়মন্ড হারবার থেকে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টনে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
আইসিএআর-সিফ্রি (সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এর ডিরেক্টর বসন্ত কুমার দাস বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া এবারের ইলিশের প্রাচুর্যের অন্যতম কারণ। গত আড়াই মাস ধরে নিয়মিত বর্ষা ও নিম্নচাপের বৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ সমুদ্র থেকে মোহনায় আসতে শুরু করে। পূর্ণিমা বা অমাবস্যার সময়ে জোয়ারও বেশি হয়, যা মাছের প্রজননের পক্ষে সহায়ক।’
সূত্র: ইটিভি ভারত, নিউজ১৮
এমএইচআর