images

আন্তর্জাতিক

ইতালির অভিবাসন নীতিতে বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণা বেআইনি: সিজেইইউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০২ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত- কোর্ট অব জাস্টিস (সিজেইইউ) ঐতিহাসিক এক রায়ে ইতালির তৈরি অভিবাসন নীতিতে ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ এবং সেই তালিকার ভিত্তিতে আলবেনিয়ায় অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ বেআইনি বলে জানিয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে নিরাপদ দেশ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত যথাযথ নয়। 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকারের অভিবাসন নীতির অন্যতম প্রধান কৌশল ছিল এই প্রকল্প। আদালতের এই রায়ে সেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ইতালিতে আসা দুই বাংলাদেশি অভিবাসীর পক্ষে মামলায় অংশ নেওয়া আইনজীবী দারিও বেলুচ্চিও বলেন, এই রায়ের পর ইতালি সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি কার্যত শেষ হয়ে গেল। আদালত তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ বাংলাদেশি ও ৬ মিশরীয় অভিবাসীকে। ইতালির নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাদের পাঠানো হয়েছিল আলবেনিয়ার শেনজিন বন্দরে। সেখানেই দ্রুত প্রক্রিয়ায় তাদের আশ্রয় আবেদন খারিজ করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

লুক্সেমবার্গে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোর্ট অফ জাস্টিস (সিজেইইউ) জানায়, একটি দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে সেই দেশের সমগ্র জনগণের জন্য নিরাপত্তা থাকতে হবে। অর্থাৎ সব ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের জন্য দেশটি নিরাপদ হতে হবে।

রায়ে বলা হয়, ইতালির মতো দেশগুলো চাইলেই ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেই তালিকা তৈরিতে নির্দিষ্ট আইনি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের পেছনে আমলে নেওয়া তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী ও আদালতের নাগালে থাকতে হবে।

ইতালির একটি আদালত ইউরোপীয় বিচারকদের জানায়, তারা এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যই পায়নি যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মতো দেশকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আদালত এমন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির কার্যালয় এক বিবৃতিতে আদালতের এই রায়কে ‘অবাক করার মতো’ বলে উল্লেখ করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই রায় জাতীয় সীমান্ত রক্ষা এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এতে সংসদ এবং সরকারের অভিবাসন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সীমিত ক্ষমতাকেও আরো খর্ব করছে। এটি গোটা ইউরোপের জন্যই উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।’

ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান 

২০২২ সালে নির্বাচনে ইতালির ডানপন্থি দলগুলো অভিবাসন ঠেকানোর কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসে। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়েই মেলোনি সরকার আলবেনিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেছিল। তবে ইতালির আদালত শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে বলেছিল, এসব দেশের ‘নিরাপদ’ তকমা দেওয়া এবং আবেদন বাতিল করে ফেরত পাঠানো ইউরোপীয় আইন পরিপন্থি।

বর্তমানে ইউরোপজুড়ে ডানপন্থি ও অতি ডান রাজনৈতিক দলগুলো অভিবাসন নীতি কঠোর করার আহ্বান জানাচ্ছে। ফলে ইতালির এই উদ্যোগ অনেক দেশেই ‘মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু ইউরোপীয় আদালতের এই রায়ের পর সেই পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা এলো।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস


এমএইচআর