আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৬ এএম
গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট ও মানবিক অবরোধের মধ্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে, যার মধ্যে ৮৮ জন শিশু।
ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন বাসিন্দারা ভয়াবহ খাদ্য সংকটে রয়েছে। মার্চে গাজার উপর ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, যা মে মাসে আংশিক শিথিল হয়। তবে এরপর থেকে মানবিক সহায়তা প্রবেশের মাত্রা এতই কম যে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গণ-অনাহারের ঝুঁকির কথা বারবার সতর্ক করেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজায় মানুষ এখন ‘মৃতও নয়, জীবিতও নয় – চলন্ত লাশ’ অবস্থায় আছে। তিনি জাতিসংঘের এক সম্মেলনে বলেন, ‘এখন আর শুধু নিন্দা বা ক্ষোভ যথেষ্ট নয়, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দরকার। তারপরই মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক মানুষ অনাহারে ভুগছে এবং ইসরায়েলের এই পরিস্থিতির জন্য অনেক দায়িত্ব রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খাদ্য কেন্দ্র স্থাপন করব যেখানে কেউ বাধাগ্রস্ত হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে গাজায় খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাবে।’
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার বলেছিলেন, ‘গাজায় কোনো অনাহার নেই’ এবং হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি কঠিন হলেও আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেব।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার ১৪ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে। আল-শিফা হাসপাতালে এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এক শিশু মোহাম্মদ ইব্রাহিম আদাস অপুষ্টির কারণে মারা গেছে কারণ বেবি ফর্মুলা পাচ্ছিল না। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ৪০ হাজারের এর বেশি এক বছরের কম বয়সী শিশু এই সংকটে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা দাবি করেছে, ১৫০ দিন ধরে বেবি ফর্মুলার প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।
সোমবার কিছু সহায়তা ট্রাক কারেম আবু সালেম ও জিকিম রোড দিয়ে গাজায় প্রবেশ করলেও ক্ষুধার্তরা তাদের জন্য লুটতরাজ শুরু করেছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, মানুষজন বলতে পারে না অপেক্ষা করবে, কারণ তাদের সন্তানরা অনেক দিন ধরে ক্ষুধার্ত।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের কিছু সীমিত সহায়তা ঢুকানোয় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হচ্ছে, কিন্তু এটা প্রয়োজনের তুলনায় “এক ফোঁটা সমুদ্রে” মাত্র। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “আমাদের আরও বিশাল পরিমাণ সহায়তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই সহায়তা চলাচল বন্ধ থাকা উচিত নয়।”
তবে একই সময়ে সোমবারই ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৮৮ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ জন খাদ্য ও সহায়তার জন্য অপেক্ষায় ছিল বলে চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে।
মে মাসের শেষ থেকে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা গাজায় মানবিক সহায়তা চালু করেছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা তাদের কাজ ও নিরাপত্তা অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছে।
গাজার তীব্র খাদ্য সংকট ও হামলার মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইসরায়েলের কঠোর নীতি ও মানবিক বিপর্যয়ের জন্য চাপ বাড়ছে। অনাহার, শিশুমৃত্যু এবং সীমিত সহায়তার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে গাজার মানুষের অবস্থার অবনতি অব্যাহত থাকবে।—সূত্র: আলজাজিরা
/একেবি/