আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যদি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজা উপত্যকায় ‘নরকের দরজা’ খুলে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
সোমবার তেল আবিবের কাছে হলন শহরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই হুমকি দেন।
কাটজ বলেন, ‘এটি একটি জটিল যুদ্ধ, আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছি যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় নরকের দরজা খুলে যাবে।’
হামাস বরাবরই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হহামাসের এই ধরনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন, পরিবর্তে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং গাজা পুনরায় দখলের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইসরায়েলের অনুমান, হামাসের কাছে এখনো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি অধিকার গোষ্ঠীর মতে, ১০ হাজর ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে আটক আছেন, যেখানে তাদের কঠোর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইসরায়েলি বিরোধী দল এবং জিম্মিদের পরিবার নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তিনি তার অতি-ডানপন্থী জোটের অংশীদারদের সন্তুষ্ট করতে এবং ক্ষমতা ধরে রাখতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
এদিকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে ১০০টিরও বেশি এনজিও ও মানবাধিকার গোষ্ঠী। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণ করতে দিচ্ছে না। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে সতর্ক করে গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা বর্তমানে তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং মানবিক সাহায্যের প্রবেশ ইসরায়েলি অবরোধের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।
ডব্লিউএফপির অনুমান অনুসারে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ একটানা বেশ কয়েক দিন ধরে কিছু না খেয়ে আছে। এরমধ্যে ১ লাখ নারী ও শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে চরম অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে নতুন করে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধাজনিত কারণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।
সূত্র: আনাদোলু, আলজাজিরা
এমএইচআর