আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৩ জুন ২০২২, ১১:১২ এএম
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে তুরস্ক সফর করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তার এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। যে তুরস্ক তাকে খুনি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল সেখানেই সম্পর্কের ক্ষতে প্রলেপ দিতে গিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। অপরদিকে অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করে তুরস্ককে আরও ওপরে তোলার চেষ্টায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এছাড়া এক বছর পরের নির্বাচনেও চোখ রয়েছে তুর্কি প্রেসিডেন্টের।
গত এপ্রিলের শেষের দিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে সৌদি আরব সফর করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ওই সফরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের পাশাপাশি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দেখা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এ সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি সফরের এরদোয়ান বলেন, তুর্কি এবং সৌদি আরব এই অঞ্চলের অভিন্ন স্বার্থ ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষুব্ধ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান খোলাখুলি আঙ্গুল তুলেছিলেন যুবরাজ মোহামেদ সালমানের দিকে। তারপর খুব দ্রুত মুসলিম বিশ্বের দুই প্রভাবশালী দেশের সম্পর্কে ধস নামতে শুরু করে। বছরে খানেকের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকে যে সৌদি আরব অনানুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
অন্যদিকে, বহুদিন পর্যন্ত সুযোগ পেলেই সৌদি রাজপরিবারকে একহাত নিতে ছাড়েননি এরদোয়ান। দুই দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় নিয়মিত দুই সরকারের মধ্যে প্রকাশ্যে নিয়মিত কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলেছে অনেকদিন। কিন্তু এপ্রিলে হঠাৎ মি. এরদোয়ানের সৌদি আরব সফর এবং জেদ্দায় যুবরাজ সালমানের সাথে তার করমর্দনের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ইঙ্গিত মেলে হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে।
গত কয়েক মাসে দুই দেশের সম্পর্কে উষ্ণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ব্যবসা, বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ উঠে গেছে। সৌদি আরবে তুর্কি টিভি সিরিজের সম্প্রচার শুরু হয়েছে । দু'দেশের মিডিয়ার পরস্পরের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চলছিল তা বন্ধ হয়েছে। এরপর বুধবার যুবরাজ রদোয়ানের বিশেষ আমন্ত্রনে যুবরাজ সালমান তুরস্কে যাওয়ার পর এটি এখন পরিষ্কার যে আঙ্কারা এবং রিয়াদের সম্পর্কের জমাট বরফ গলছে।
অপরদিকে এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
এই সফর নিয়ে বিবিসি বিশ্লেষণে বলেছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানই সৌদি আরবের সাথে নতুন করে সুসম্পর্ক তৈরিতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন।
লন্ডনে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশন্যাল ইন্টারেস্টের প্রধান সাদি হামদি বলেন, আমি বলবো এরদোয়ান কিছুটা হলেও নতজানু হয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে চটে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে তিনি উঠে-পড়ে লেগেছেন। প্রথম এবং প্রধান কারণ তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট।
তুরস্কের মুদ্রা লিরা একরকম মুখ থুবড়ে পড়েছে। রয়টার্স বার্তা সংস্থার খবর অনুয়ায়ী ২০২১ সালে এক বছরেই ডলারে বিপরীতে লিরার মূল্যমান অর্ধেক হয়ে গেছে। মুদ্রাষ্ফীতির হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
হামদি বলেন, 'নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি। নির্বাচনের আগে উপসাগর থেকে বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা হলেও সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন এরদোয়ান।'
প্রথম কথা, খাসোগি হত্যাকান্ডের পর গোত্তা খাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন যুবরাজ সালমান। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তাকে খানিকটা হলেও সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে একইসাথে সাদি হামদি মনে করেন, বর্তমান অথনৈতিক সংকটে সস্তায় তুরস্কের সম্পদে অংশীদার বা মালিক হওয়ার সুযোগ সৌদি আরব ছাড়তে চাইছে না।
তিনি বলেন, তুরস্কের সমাজ ও রাজনীতির অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ পেয়েছে সৌদি আরব এবং আমিরাত।
একে