আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
গাজার সব করিডোর বন্ধ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে এখন বিমান থেকে বোমার পাশাপাশি ত্রাণও ফেলছে বর্বর ইসরায়েল।
গাজার লাখ লাখ অভুক্ত মানুষের জন্য মাত্র ৭ বস্তা ত্রাণ ফেলেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। কিন্তু গাজাবাসী পেয়েছেন মাত্র ৫ বস্তা।
শনিবার রাতে আকাশ থেকে এসব ত্রাণের বস্তা ফেলা হয় গাজার একটি অংশে। এগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। অন্য দিকে, রোববার থেকে গাজায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।
প্রবল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাঝে গাজায় অবশেষে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইসরায়েল। আকাশ থেকে ত্রাণের বস্তা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে গাজায়, ক্ষুধার্তেরা তা-ই সংগ্রহ করে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে ৬ জনের মৃত্যু
শনিবার রাত থেকে এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বা খাবার এখনও গাজায় পৌঁছায়নি।
শনিবার ইসরায়েলের সেনা (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় সাত বস্তা ময়দা, চিনি এবং খাবারের ক্যান ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু তার সরকারের সিনিয়রদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেন।
যে পরিমাণ খাবার গাজায় ফেলার কথা বলা হয়েছে, একটি ট্রাকেও তার চেয়ে বেশি খাবার ধরে। ইসরায়েলি সেনার দাবি, রোববার সারাদিন তারা যুদ্ধ বন্ধ রাখবে গাজায় খাবার বিতরণের জন্য।
জাতিসংঘ সংস্থাগুলিকেও ত্রাণের কাজে সাহায্য করা হবে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার তিনটি এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি পালন করবে ইসরায়েলি সেনারা। ত্রাণকার্যে সহায়তা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ্ এবং গাজা শহরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ত্রাণকার্যের জন্য ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। যে সব এলাকা জনবহুল, সেখানে আপাতত কিছুটা বিরতি দেওয়া হবে। তবে সামরিক অভিযান থামবে না, জানিয়ে দিয়েছে সেনারা।
গাজার একমাত্র জল বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ গত মার্চ থেকে বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। আইডিএফ জানায়, রোববার সেই প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করা হবে।
সংবাদমাধ্যমে দাবি, গাজার উত্তর দিকে বেইট লাহিয়া অঞ্চলে রাতে আকাশ থেকে খাবার ফেলা হয়েছে। একটি খাবারের বস্তা সরাসরি ক্ষুধার্তদের তাবুর উপরে পড়েছে এবং ১১ জন জখম হয়েছেন।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি, ইসরায়েল সাতটি বস্তা ফেললেও গাজার মানুষ পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি বস্তা। বাকি দু’টি এমন জায়গায় পড়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছোতে পারে না।
ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলি শনিবার গাজায় ইসরায়েলের এই ত্রাণকার্যকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হচ্ছে গাজায়। সেখানকার মানুষ দিনের পর দিন স্রেফ না-খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। বহু শিশুর মৃত্যু হচ্ছে খাবারের অভাবে।
ইসরায়েলের এক সেনা কর্মকর্তা সম্প্রতি স্বীকার করে নেন, গাজায় খাদ্য নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তবে দুর্ভিক্ষের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনিও।
আরও পড়ুন: গাজায় পানিও এখন মৃত্যুর কারণ!
গাজায় খাদ্য এবং ত্রাণসামগ্রী ঢুকতে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহু নিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে তার সমালোচনা চলছে। নেতানিয়াহুর যুক্তি, জাতিসংঘের পাঠানো এই খাদ্যসামগ্রী আসলে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সুবিধা করে দিচ্ছে। তাই কোনও ত্রাণ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।
গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্যের হাহাকার চলছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ফ্রান্স, বিভিন্ন দেশে গাজার সমর্থনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলের নীতির নিন্দা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ। আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই গাজায় খাদ্য বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইডিএফ। কিন্তু তা ক্ষুধার সিন্ধুতে বিন্দু বর্ষণের সমান, দাবি পর্যবেক্ষকদের।
-এমএমএস