ঢাকা মেইল ডেস্ক
২৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৪ এএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর তার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের ‘ওপেন’ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেখানে তাদের পাবে, সোজা গুলি করবে।’
আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের (আই-ইউনিট) হাতে আসা শেখ হাসিনার গোপন ফোনালাপ রেকর্ডিং থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন এবং ভারত পালিয়ে যান। তার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়, যার ফলে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়।
আল-জাজিরা এই ফোনালাপের সত্যতা যাচাই করতে অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়েছে। এর পাশাপাশি, ফোনালাপকারীদের শনাক্ত করতে ভয়েস ম্যাচিং করা হয়েছে।
গত বছরের ১৮ জুলাই, শেখ হাসিনা এক ফোনালাপে তার সহযোগীকে বলেছিলেন, আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি একদম। এখন লিথাল ওয়েপনস ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে। শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা ছিল বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলা চালানোর জন্য।
ফোনালাপে শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণ সিটির তৎকালীন মেয়র ফজলে নূর তাপসের সাথে বিক্ষোভ দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে গ্যাদারিং দেখবে, সেখানে ওপর থেকে...এখন ওপর থেকে করা হচ্ছে, অলরেডি শুরু হয়ে গেছে কয়েকটা জায়গায়। কিছু সরে গেছে।’
তবে, নিরাপত্তা বাহিনী তখন হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার কথা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরিফ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের সামনে হেলিকপ্টার থেকে টার্গেট করে গুলি ও টিয়ার শেল ফেলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আহতদের গুলির জখম ছিল অস্বাভাবিক এবং এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা অবাক হয়েছিল।
এই ফোনালাপগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার জন্য প্রসিকিউটররা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এই আদালত শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রীদের এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে। ১০ জুলাই, শেখ হাসিনা ও তার দুই সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, এবং আগামী আগস্ট মাসে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে পারে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি ফোনালাপগুলো রেকর্ড করেছে। এর আগেও অভিযোগ ছিল, এনটিএমসি বিরোধী দল বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর এবং হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও গোয়েন্দাগিরি করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা জানতেন যে তার ফোনালাপ রেকর্ড করা হচ্ছে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি জানি, জানি, সমস্যা নেই।’
রংপুরে গত বছরের ১৬ জুলাই বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যু আন্দোলনটির মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গোপনে রেকর্ড হওয়া এক ফোনালাপে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সহযোগী সালমান এফ রহমান পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত পেতে তদ্বির করছেন। ফোনালাপে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন?
এছাড়া, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম আল-জাজিরাকে বলেন, পুলিশ আমাকে বারবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করতে চাপ দিয়েছে, যাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আবু সাঈদ ইটপাটকেলের আঘাতে মারা গেছে, যদিও তার মৃত্যু হয়েছিল পুলিশের গুলিতে।
আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র এই অভিযোগের জবাবে দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা কখনোই ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। তবে আল-জাজিরার তদন্ত অনুযায়ী, রেকর্ডিংটি সঠিক এবং বিকৃত করা হয়নি। সূত্র: আল জাজিরা
এইউ