আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুওয়াইদা প্রদেশে সশস্ত্র দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন উপজাতি যোদ্ধাদের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকসহ কমপক্ষে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রোববার দেশটির রাজধানী দামেস্কের একটি সড়কে দ্রুজ গোষ্ঠীর এক সবজি বিক্রেতা অপহরণের শিকার হন। এর পরপরই সেখানে পাল্টা অপহরণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে অপহৃতদের মুক্তি দেওয়া হলেও সোমবার সুইদা শহরের বাইরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সোয়াইদা২৪ বলেছে, উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি মর্টার হামলায় আশপাশে কয়েকটি গ্রামে বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অঞ্চলে সেনা মোতায়েন, ‘দ্রুত ও শক্তভাবে’ সংঘাত নিরসন ও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ করিডোর চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে সুওয়াইদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইনদের মধ্যে কয়েকমাস ধরে উত্তেজনার চলছে। এর আগে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুজদের রক্ষায় সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছিল ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী কয়েকটি ট্যাঙ্কে হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি করেছে। তবে এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি তারা।
এএফপির একজন আলোকচিত্রী ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন, সুওয়াইদার রাস্তাঘাট এখন জনমানবশূন্য। জানাজার সময়ও সেখানে গুলির শব্দ শোনা গেছে।
সুওয়াইদার বাসিন্দা ৫১ বছর বয়সী আবু তাইম বলেন, ‘আমরা চরম আতঙ্কিত। এখানে নির্বিচারে কামানের গোলা ছোড়া হচ্ছে। সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।’
সোয়াইদা২৪ জানিয়েছে, প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সংঘর্ষ ও গ্রামাঞ্চলে কামানের গোলাবর্ষণে অনেকে আহত হয়েছেন। কয়েক ডজন মানুষকে উদ্ধারের পর স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে এক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, দুইদিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের ৪৬ জন দ্রুজ, ১৮ জন বেদুইন, সামরিক পোশাক পরিহিত ৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এবং ৪ জন বেসামরিক রয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-আখবারিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষে বেসামরিক জনগণকে রক্ষার চেষ্টা করার সময় ওই এলাকায় মোতায়েন করা কমপক্ষে ৬ জন সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
এএফপির একজন সংবাদদাতা সশস্ত্র যোদ্ধাদের বহনকারী যানবাহন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশাল সামরিক কনভয়, বেসামরিক যানবাহন এবং মোটরসাইকেলকে শহরের দিকে যেতে দেখেছেন। পাশাপাশি আহতদের দামেস্কের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সও দেখছেন তিনি।
যদিও দ্রুজ আধ্যাত্মিক নেতারা শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং দামেস্ককে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান, যার ফলে ১৯৬৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। জানুয়ারিতে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠিত হয়। তবে আহমেদ আল-শারার ইসলামপন্থী বাহিনী তিনমাস আগে সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করলেও সবগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর এখনও তার নিয়ন্ত্রণ নেই।
এমএইচআর