আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২৯ পিএম
যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সে প্যালেস্টাইনপন্থী সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বিতর্কিত এ প্রস্তাবটি গত বুধবার (২ জুলাই) সংসদে ভোটে উত্থাপন করা হলে, ৩৮৫ জন এমপি পক্ষে ও ২৬ জন বিপক্ষে ভোট দেন।
ব্রিটিশ ইসলামিক সংবাদমাধ্যম ফাইভ পিলারস জানিয়েছে, এই প্রস্তাবে মুসলিম এমপিদের মধ্যে টিউলিপসহ কয়েকজন পক্ষে ভোট দেন। তবে অধিকাংশ মুসলিম এমপি ভোটদান থেকে বিরত থাকেন।
সংগঠনটি গত মাসে ইংল্যান্ডের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানের গায়ে লাল রঙ ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা যুক্তরাজ্যের ইসরায়েলপন্থি নীতি এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন থেকে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বা সমর্থন আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ব্রিটিশ আইনে এটি এমন পর্যায়ে রাখা হয়েছে যেখানে আল-কায়েদা ও আইএস-এর মতো সংগঠন রয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্বাধীন এমপি জারা সুলতানা। তিনি বলেন, একটি রঙের স্প্রে ক্যানকে আত্মঘাতী বোমার সঙ্গে তুলনা করা শুধুই হাস্যকর নয়, বরং এটি আইনের এক ভয়ানক অপব্যবহার।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ এই পদক্ষেপকে আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সরকার মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার দমনে এক ভয়ানক নজির স্থাপন করছে। এটি গ্রেফতার, নজরদারি ও দমনমূলক আচরণের পথ প্রশস্ত করবে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াভেট কুপার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, যুক্তরাজ্যে সহিংসতা ও অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের কোনো স্থান নেই। বৈধ প্রতিবাদের মধ্যেও জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমাদের জিরো টলারেন্স নীতিই কার্যকর থাকবে।
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ এই নিষেধাজ্ঞাকে অন্যায্য ও দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সরকারি হিসেবে বলা হয়েছে, সংগঠনটির এসব কর্মসূচির কারণে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের পরপরই ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর কর্মীরা ব্রিস্টলে এলবিট সিস্টেমসের একটি সাইটের প্রবেশপথ অবরোধ করে এবং সাফোক অঞ্চলের একটি ভবনের ছাদ দখলে নেয়।
এ নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নিয়োজিত বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো প্রাণহানির উদ্দেশ্য ছাড়া সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে দেখা উচিত নয়।
এমপি জারাসহ আরও অনেকে দাবি করেছেন, ভোটে অংশ নেওয়া অনেক এমপি বাস্তবিক বাধ্যবাধকতার শিকার হয়েছেন। কারণ, প্রস্তাবে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পাশাপাশি আরও দুটি গ্রুপ নিষিদ্ধের বিষয় ছিল। একটির বিপক্ষে ভোট দিলে অপর দুটি গ্রুপকেও নিষিদ্ধ করা যেত না।
এইউ