images

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান-চীন সীমান্তে ভারতের ‘গুপ্তচর’ ছায়া-উপগ্রহ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০ মে ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

পাকিস্তানের সঙ্গে মাত্র চার দিনের যুদ্ধেই নিজের সামরিক শক্তির একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা পেয়ে গেছে ভারত। 

আর এ কারণেই এখন উঠেপড়ে লেগেছে নিজেদের সমরাস্ত্রের প্রযুক্তিগত মাণ বৃদ্ধি করা নিয়ে। 

তারই অংশ হিসেবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিও। 

সীমান্তে নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যুদ্ধবিমানের জিপিএস জ্যামিংয়ের মতো একগুচ্ছ কাজে সেনাবাহিনী এটিকে ব্যবহার করতে পারবে বলে জানা গেছে।

বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের হাতে রয়েছে এই প্রযুক্তি। সেই তালিকায় এবার নাম উঠল ভারতের। অত্যাধুনিক এই এয়ারশিপ শত্রুর ওপর নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে যাচ্ছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

চলতি বছরের ৩ মে মধ্যপ্রদেশের শেওপুরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের প্রথম পরীক্ষায় সাফল্য পায় বলে দাবি করেছে ডিআরডিও। 

আগরার অ্যারিয়াল ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্টের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট যানটি তৈরি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। 

প্রথম উড্ডয়ন শেষে এর ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং ডিআরডিওর চেয়ারম্যান সমীর ভি কামাত।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপটি পরীক্ষার সময়ে মাটি থেকে ১৭ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায়। এটি মোট ৬২ মিনিট বাতাসে ভেসে ছিল। 

ওজন বহনেও এটি সক্ষম বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির কাজে একে সেনা বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ) ব্যবহার করতে পারবে বলে স্পষ্ট করেছে ডিআরডিও।

দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় নিরাপত্তা এবং নজরদারি বৃদ্ধির জন্য ছদ্ম-উপগ্রহ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। অবশেষে তাতে সাফল্য পেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। 

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ মহাশূন্যে না গিয়েও গুপ্তচর উপগ্রহের মতো কাজ করতে সক্ষম। ফলে চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সীমান্তে নজরদারি অনেক বেশি সহজ হবে।

অতিকায় বেলুনের আকারের মানববিহীন এই যান কিন্তু একেবারেই ড্রোন নয়। ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘোরাফেরা করতে সক্ষম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে হাই-অল্টিটিউড প্ল্যাটফর্ম সিস্টেম বা এইচএপিএস হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

কৃত্রিম উপগ্রহের বেশ কিছু কাজ এর মাধ্যমে করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।

ডিআরডিও আরো জানায়, বাণিজ্যিক বিমান বায়ুমণ্ডলের যে স্তর দিয়ে যাতায়াত করে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ থাকবে তার উপরে। মেঘ-ঝড়-বৃষ্টি এর উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। 

কৃত্রিম উপগ্রহের চেয়ে অনেক কম খরচে টেলিযোগাযোগ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির কাজ চালাতে সক্ষম এই যান।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এটি অত্যন্ত হালকা হওয়ায় যানটিকে বায়ুমণ্ডলের ওই স্তরে নিয়ে যেতে তাদের সমস্যা হয়নি। 

হাই-অল্টিটিউড প্ল্যাটফর্ম সিস্টেমটিতে বিমানের মতো ডানা রয়েছে। এর ভিতরে একটি প্রপালসান সিস্টেম বসিয়েছেন তারা, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বৈদ্যুতিক মোটর ছাড়া আর কিছুই নয়।

এটি ১,৫০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম। এতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা ও সেন্সর বসিয়েছেন ডিআরডিওর বিজ্ঞানীরা। সেগুলির সাহায্যে নজরদারির কাজ চালাতে পারবে সেনাবাহিনী।

তবে, বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সময়ে একে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।

গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারি ছাড়া স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে অন্য কাজে ব্যবহার করার সুযোগও রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিতে এটি দারুণ ভাবে কাজ করে। 

উদাহরণ হিসাবে মিরা অ্যারোস্পেসের কথা বলা যেতে পারে। আফ্রিকার দেশে রুয়ান্ডার বেশ কিছু এলাকায় ৫জি নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে দারুণ কাজ করেছিল ওই যান।

এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নজরদারির কাজে সংশ্লিষ্ট স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে কাজে লাগাতে পারে ভারত সরকার। 

২০১৫ সালে এই ধরনের একটি যানের পরীক্ষামূলক উড়ান চালায় চীনা প্রতিরক্ষা সংস্থা ইউয়ানমেং এয়ারশিপ। দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ এবং নজরদারির কাজে বেইজিং এটিকে ব্যবহার করে।

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। 

আর এতে বড় ভূমিকা নিতে পারে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ। এখন থেকেই সেই রাস্তায় চলা শুরু করেছে ভারত।

-এমএমএস